করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পাতা হচ্ছে

ভ্রমণে গেলেই করোনা ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সুযোগ, এমন লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েই পর্যটকদের জন্য ট্যুর প্যাকেট বানিয়েছে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা।যাঁরা কোভিড-১৯ টিকা আগে পেতে চান, এই সফরের সঙ্গী হয়ে উঠুন,এভাবেই ভ্রমণ পিপাসুদের আমেরিকা যাত্রার কথা বলেছে মুম্বইয়ের ট্রাভেল এজেন্সিটি।

Picture shows illustration for the coronavirus vaccine in Zagreb, Croatia, August 14, 2020. A Covid-19 vaccine being developed by Pfizer and Germany’s BioNTech has been found to be more than 90 per cent effective Photo: Igor Kralj/PIXSELL.

Picture shows illustration for the coronavirus vaccine Source: AAP

হাইলাইটস

  • ভ্যাকসিন পাওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েই পর্যটকদের জন্য ট্যুর প্যাকেট বানিয়েছে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা।
  • কোভিড-১৯ টিকা বাজারে না এলেও তা নিয়ে সম্ভাবনার পাশাপাশি সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন এমস ডিরেক্টর।
  • ভ্যাকসিন কবে আসবে তা বলা সম্ভব নয় জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভ্রমণ পিপাসুদের আমেরিকায় তিন রাত, চারদিনের এই প্যাকেজে খরচ এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।হোয়াটসঅ্যাপে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে এই মেসেজ। মেসেজে বলা হয়েছে, শীঘ্রই মার্কিন মুলুকে করোনা ভ্যাকসিন আনছে ফাইজার।সম্ভাব্য তারিখ ১১ ডিসেম্বর। বাছাই করা কয়েকজন ক্লায়েন্টকে তা পাওয়ার সুযোগ করে দিতে তৈরি। খরচ ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৯৯ টাকা।

মুম্বই থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়া-আসার ভাড়াও এর মধ্যে ধরা আছে। তিন রাত ও চারদিন সেখানে থাকবেন। ব্রেকফাস্ট এবং ভ্যাকসিনের একটি ডোজ ফ্রি। স্থানীয় যাতায়াত, জি এস টি ইত্যাদি অতিরিক্ত।মেসেজ ছড়িয়ে পড়তেই হইচই পড়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে,তবে ট্রাভেল এজেন্সি জানিয়ে দিয়েছে,তারা পুরো বন্দোবস্তই করছে মার্কিন আইনের আওতায় থেকে।বেআইনিভাবে কিছুই করা হবে না,পর্যটকদের থেকে অগ্রিমও চাওয়া হচ্ছে না। তবে ঠিক কবে যাওয়া হচ্ছে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত কেবলমাত্র নাম রেজিস্টার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে করোনার কার্যকরী টিকা বা ভ্যাকসিন কবে আসবে তা বলা সম্ভব নয় জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গবেষণা চলছে, তাই এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দেশের করোনা পীড়িত ৯ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন,কবে টিকা আসবে সে সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না। এটা কারোর হাতে নেই।

বিজ্ঞানীরাই বিষয়টি দেখছেন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোর দিয়েছেন নিরাপদ টিকা এবং তার বণ্টনের ক্ষেত্রে। তাঁর আশ্বাস, কেন্দ্রীয় সরকার যে টিকাই দিক না কেন তা সমস্ত দিক থেকেই নিরাপদ হবে।যাতে সকলের জন্য টিকা পাওয়া যায় সেটাই হবে সরকারের অগ্রাধিকার। কোল্ড চেন-সহ টিকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করার কথাও রাজ্যগুলিকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

টিকা নিয়ে রাজনীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।সম্প্রতি টিকা ইস্যুতে মোদী সরকারকে বিঁধেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। নাম না করে রাহুলের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উল্লেখ্য সারা বিশ্বে অন্তত ২৫০টি সম্ভাব্য টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। ভারতেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে কয়েকটি টিকার।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের কোভিড পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দিয়েছে রাজ্য সরকার। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিয়ো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এমনটাই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ,প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছে রাজ্যের কোভিড জয় করে সুস্থতার সংখ্যা। এই সংখ্যা যথেষ্ট সন্তোষজনক বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য আট মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) তথা কেন্দ্রের কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান ভি কে পাল-সহ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিকরা। মূলত করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকানো এবং কোভিড টিকা বণ্টনের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, হরিয়ানা, রাজস্থান, ছত্তীশগঢ় এবং কেরালার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বৈঠকে মমতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছটপুজো এবং তার সঙ্গে শহরতলিতে ট্রেন চালানোর পর যে ভাবে করোনার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে রাজ্য। সেই সঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছেন, বাংলায় কোভিড সংক্রামিত রোগীর সংখ্যার হার এবং মৃত্যু হারও কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একাধিক রাজ্যের সীমানা রয়েছে। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তও রয়েছে। ফলে পড়শি রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও এই রাজ্যে রোগীরা আসেন। তা সত্ত্বেও অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ এই যুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশাকর্মী, চিকিৎসক, নার্স-সহ সব কোভিড যোদ্ধার অবদানের কথাও বলেছেন তিনি।

এর আগে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকার প্রভাব কার্যকর থাকতে পারে ন’মাস থেকে এক বছর,এমনই দাবি করেছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস বা এমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেছেন,এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কোভিড টিকার কার্যকারিতা ন’মাস থেকে এক বছর স্থায়ী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

পাশাপাশি, তাঁর আরও দাবি, ২০২৩ সালের মধ্যে করোনার মতো অতিমারির সমাপ্তির কথা ঘোষণা করতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা, হু।কোভিড-১৯ টিকা বাজারে না এলেও তা নিয়ে সম্ভাবনার পাশাপাশি সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন এমস ডিরেক্টর। তিনি বলেছেন, কোভিডের মতো অতিমারি খুব শীঘ্রই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে,এমন ভাবা ভুল হবে।বরং এই ভাইরাসের প্রকোপ আরও কিছুকাল স্থায়ী হবে।তবে ২০২৩ সালে হু কেন এই অতিমারি সমাপ্তির কথা ঘোষণা করতে পারে, এই প্রশ্নের জবাবে গুলেরিয়ার দাবি, অতিমারির মতো ভয়াবহ আকার ছেড়ে হয়তো একটি সাধারণ রোগে পরিণত হবে কোভিড-১৯।

কী ভাবে করোনাভাইরাসের মারণক্ষমতা কমবে, তা-ও জানিয়েছেন এমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া।তাঁর মতে, কোভিড সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে হাতিয়ার হয়ে উঠবে, এর টিকা। জনসংখ্যার একটা বড় অংশের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করবে এটি। ফলে ২০২৩ সালের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার আরও কমে যাবে বলে মনে করছেন এমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া।

 

 


Share
Published 26 November 2020 12:28am
Updated 26 November 2020 12:30am
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends