চীনের উইঘুর মুসলিমদেরকে এই প্রথম ‘নির্যাতিত’ বলে উল্লেখ করলেন পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিস এর আগে রোহিঙ্গা এবং ইয়াজিদিদের নিয়ে কথা বলেছেন। এবারই প্রথম তিনি উইঘুরদের কথা বললেন।

Pope Francis delivers his speech as he celebrates Mass in St. Peter's Basilica at the Vatican, Sunday, Nov. 22, 2020.

Pope Francis delivers his speech as he celebrates Mass in St. Peter's Basilica at the Vatican, Sunday, Nov. 22, 2020. Source: AFP

চীনের মুসলিম উইঘুরদেরকে এই প্রথমবারের মতো ‘নির্যাতিত’ জনগোষ্ঠী বলে অভিহিত করলেন পোপ ফ্রান্সিস। মানবাধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই এ বিষয়ে তার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল।

‘লেট আস ড্রিম: দ্য পাথ টু এ বেটার ফিউচার’ বইয়ে পোপ ফ্রান্সিস আরও বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর ঘটনা থেকে সরকারগুলোকে স্থায়ীভাবে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

ইংরেজি ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠার এই বইটি লেখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন তার জীবনীকার অস্টিন ইভারেই। পোপ ফ্রান্সিস এতে বলেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর শেষে অসাম্য দূরীকরণে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরিধান করার বিষয়টিকে যারা সরকারের পক্ষ থেকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিষয় বলে মনে করছেন, । পুলিশী হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদ যারা করেছেন, তাদের প্রশংসা করেন তিনি।
বইটির একটি অংশে তিনি বলেন,

“আমি প্রায়ই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীগুলো নিয়ে চিন্তা করি: রোহিঙ্গা, অসহায় উইঘুর, ইয়াজিদি।”

ইসলামী দেশগুলোতে নির্যাতিত খ্রিস্টানদের বিষয়েও মন্তব্য করেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে পলায়ন করা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এর আগেও কথা বলেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি ইরাকে ইসলামিক স্টেটের দ্বারা ইয়াজিদিদের হত্যার বিষয়েও বলেছেন। তবে, এবারই প্রথম তিনি উইঘুরদের কথা বললেন।

ধর্মনেতাগণ, আন্দোলনকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সরকারগুলো বলেছে, চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চল জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং সেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছে। এছাড়া, ১ মিলিয়নেরও বেশি লোককে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

গতমাসে, ভ্যাটিকানে এক কনফারেন্সে উইঘুরদের সঙ্গে চীনের আচরণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও।

চীনকে হেয় করার জন্য এসব বলা হচ্ছে- বলে এসব আপত্তি প্রত্যাক্যান করে বেইজিং। তারা বলে, কাউন্টার-টেররিজম এবং ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেসব ক্যাম্প ভোকেশনাল এডুকেশন এবং ট্রেইনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অনেক ভাষ্যকার বলেছেন যে, ইতোপূর্বে উইঘুরদের নিয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছিল ভ্যাটিকান। কারণ, বিশপদের নিয়োগ নবায়ন করা নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি মতৈক্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া চলছিল। মিস্টার পম্পেও মতৈক্যে পৌঁছানোর এই প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে, সেপ্টেম্বর মাসে তারা নবায়ন করার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছান।
বইটিতে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) এর প্রতি পরিষ্কার ভাষায় সমর্থন জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।

কতিপয় অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ-বিজ্ঞানী একটি বিতর্কিত নীতির সমর্থন করেন, যেখানে প্রতিটি নাগরিককে সরকার বিনাশর্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। এটাকে বলা হচ্ছে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গতবছরের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে অ্যান্ড্র ইয়াংয়ের নির্বাচনী প্রচারণার মূল ভিত্তি ছিল এটি।

তিনি বলেন,

“কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বের চিন্তাভাবনার জন্য সমাজে উপার্জনহীন ব্যক্তিদের মূল্য উপলব্ধি করার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেজন্য আমি বিশ্বাস করি, ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) মতো চিন্তাভাবনাগুলো খতিয়ে দেখার এটাই সময়।

তিনি আরও বলেন,

“ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) প্রদানের মাধ্যমে আমরা মানুষকে মুক্ত করতে পারবো এবং সমাজের জন্য তাদেরকে কাজ করতে সক্ষম করে তুলতে পারবো, একটি মর্যাদাসম্পন্ন উপায়ে।”

এদিকে, চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতির আবারও সমালোচনা করেন পোপ ফ্রান্সিস। রক্ষণশীলরা এই তত্ত্বটি সমর্থন করে থাকেন। এতে মনে করা হয় যে, বড় বড় ব্যবসাগুলোকে এবং ধনী ব্যক্তিদেরকে আয়কর-সহ অন্যান্য নানা রকম প্রণোদনা প্রদান করা হলে বিনিয়োগ বাড়রবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে সমাজের বাকি অংশও উপকৃত হবে।

পোপ ফ্রান্সিস এই তত্ত্বটিকে বলেন,

“এই জঘন্য ট্রিকল-ডাউন থিওরি, যেখানে ধারণা করা হয় যে, বর্ধনশীল অর্থনীতি আমাদের সবাইকে ধনী করবে, এটা ভুল ধারণা।”

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 24 November 2020 6:12pm
Presented by Sikder Taher Ahmad
Source: Reuters, SBS


Share this with family and friends