করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা জানতে হবে

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে কী করতে হবে? অফিসিয়াল পরামর্শ হচ্ছে, অনলাইনে গুজবের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।

Lost your sense of smell or taste? It could be a symptom of COVID-19.

Lost your sense of smell or taste? It could be a symptom of COVID-19. Source: Getty Images/Tom Merton

করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের পর এ নিয়ে । এর পর করোনাভাইরাসের দ্বারা অসুস্থ্য হওয়ার বিষয়ে নানা রকম তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে যা অনেক সময়ই সঠিক ও যথার্থ তথ্য নয়।

আপনি যদি নিজেকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যমের প্রতি ঝুঁকবেন না। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে, এর বিস্তৃতি রোধ করতে হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো কী কী?

প্রথমত, আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেন, থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত হাল-নাগাদ তথ্য আপনি সংগ্রহ করতে পারেন এবং করণীয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন সরকারের থেকে।

করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো ফ্লুর উপসর্গগুলোর মতোই: জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাস-কষ্ট, গলায় প্রদাহ এবং অবসাদ অনুভব করা।

এই ভাইরাসে প্রথমে আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ১৪ দিন পর এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সেজন্য সরকার আহ্বান জানিয়েছে, সম্প্রতি যারা চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে এসেছেন তারা যেন ১৪ দিনের জন্য ঘরে অবস্থান করেন এবং অন্যদের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন রাখেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝে আরও তীব্র উপসর্গও দেখা যায়, যেমন, শ্বাস-কষ্ট কিংবা নিউমোনিয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের আগে থেকেই নানা রকম শারীরিক সমস্যা রয়েছে, যেমন, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা আরও নাজুক আকার ধারণ করে।

করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?

বিভিন্ন দেশে জনে জনে করোনাভাইরাস সংক্রামিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এর মতে, করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা জানা যায় তার ভিত্তি হলো এর আগে আমরা যে-সব ভাইরাসের মুখোমুখি হয়েছি সেগুলোর মাধ্যমে। যেমন, মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রম) এবং সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রম)।

আগের এসব ভাইরাস-সম্পর্কিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে হাঁচি এবং কাশির মধ্যে প্রাপ্ত শ্বাসতন্ত্রের ড্রপলেট বা ক্ষুদ্র তরল-কণার মাধ্যমে।

যেখানে এই ভাইরাস রয়েছে সেখানে হাত লাগানোর পর সেই হাত দিয়ে যদি মুখ বা চেহারা স্পর্শ করা হয় তাহলে কি এর সংক্রমণ ঘটবে? সিডিসি বলছে, এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত নয়। করোনাভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি যদি অসুস্থ না হন, তার মধ্যে যদি কোনো উপসর্গ দেখা না দেয়, তাহলেও কি তার মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়বে? এ বিষয়টিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মানুষ শুধুমাত্র তখনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে যখন সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ঘনিষ্ট সংস্পর্শে এসেছে।

ক্লোজ কন্টাক্ট বা ঘনিষ্ট সংস্পর্শ সম্পর্কে হেলথ ডাইরেক্ট ওয়েবসাইট বলছে, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে মুখোমুখি কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় কাটানো কিংবা কমপক্ষে দু’ঘণ্টা ব্যাপী ঘনিষ্টভাবে সময় কাটানো।

করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচানোর উপায়

জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে । তবে, যারা ইতোমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য এটি সহায়ক। এর ফলে তাদের শ্বাসতন্ত্রের ড্রপলেটগুলো ছড়িয়ে পড়বে না।

পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কীভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হবে। যেমন, নিয়মিত হাত ধোওয়া, হাত ধোওয়া না হলে মুখে বা চেহারায় হাত দিয়ে স্পর্শ না করা এবং শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত কারও ঘনিষ্ট সংস্পর্শে না যাওয়া।
আপনি যদি ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে সরকার পরামর্শ দিচ্ছে  চেক করতে। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ানদেরকে চীন ভ্রমণে সতর্ক করেছে সরকার। চীন থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনি যদি সাম্প্রতিক পরামর্শের খোঁজ করেন, তাহলে সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য-উপাত্তের পরিবর্তে হেলথ ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট দেখুন। বিগত সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এগুলোতে বলা হয় কীভাবে এই ভাইরাসটির প্রাদূর্ভাব হয়েছে এবং আরও বলা হয় চীনা খাবার পরিহার করতে ও চায়নিজ-অস্ট্রেলিয়ান জনসংখ্যা অধ্যুষিত সাবার্ব বা লোকালয়গুলো পরিহার করতেও বলা হয়। এগুলো অফিসিয়াল পরামর্শ নয়।

করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে মনে হলে কী করবো?

আপনার মধ্যে যদি গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন, তীব্র শ্বাস-কষ্ট, তাহলে ট্রিপল জিরোতে (০০০) কল করুন। সাম্প্রতিক সময়ে যদি আপনি ভ্রমণ করে থাকেন তাহলেও তা অপারেটর এবং প্যারামেডিকসদেরকে অবহিত করুন।

আপনার শরীরে যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয় এবং সেগুলো যদি জরুরি না হয় সেক্ষেত্রে কী করণীয় তা জানতে -এর সহায়তা নিতে পারেন। আপনি যদি ডাক্তারের কাছে যেতে চান কিংবা হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে যেতে চান এবং আপনি যদি সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে তাদের সঙ্গে আগে টেলিফোনে কথা বলে নিন এবং বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করুন।

শরীরে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দিলে আপনার উচিত হবে অন্যদের মাঝে এই অসুস্থ্যতা না ছড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন, নিয়মিত হাত ধুতে হবে, ঘরে অবস্থান করতে হবে এবং গণ-পরিবহন পরিহার করতে হবে, হাঁচি কিংবা কাশি দেওয়ার সময়ে মুখ ঢাকতে হবে (কনুইতে হাঁচি দিতে হবে) এবং কোনো বিশেষ কারণে যদি আপনাকে বাইরে যেতেই হয়, সেক্ষেত্রে সার্জিকাল মাস্ক পরিধান করতে হবে।

ডাক্তার যদি সন্দেহ করে যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সেক্ষেত্রে তারা আপনাকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদাভাবে থাকার পরামর্শ দিতে পারে। সুনিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে কিংবা সম্প্রতি চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে ভ্রমণ করে এলে অবশ্যই ১৪ দিনের জন্য ঘরে আলাদাভাবে অবস্থান করতে হবে। যদি কোনো উপসর্গ দেখা না দেয় তারপরও এই ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।

হোম আইসোলেশনের মানে কী সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংক্ষেপে, এর অর্থ হলো ঘরে অবস্থান করা এবং অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য কোনো কারণে ঘর ছেড়ে বের হবেন না। আর, চিকিৎসা সেবার জন্য ঘর থেকে বের হতে হলে তাদেরকে আগেই ফোন করুন এবং আপনি যে আসছেন তা জানান, সম্ভব হলে মাস্ক পরিধান করুন এবং ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করুন।

আপনার ঘরে যদি আরও লোকজন বাস করে সেক্ষেত্রে তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে ভিন্ন একটি রুমে থাকুন এবং সম্ভব হলে ভিন্ন একটি বাথরুম ব্যবহার করুন। কারও সঙ্গে প্লেট, কাপ, বিছানাপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র শেয়ার করবেন না। আপনি কোনো কিছু ব্যবহার করলে ব্যবহারের পর তা ভালভাবে ধুয়ে নিন। অন্যদের মাঝে অবস্থান করার সময়ে সার্জিকাল মাস্ক পরিধান করুন এবং হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময়ে মুখ ঢাকুন। এছাড়া, নিয়মিত হাত ধুতে হবে।

করোনাভাইরাস নিয়ে কতোটা উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে একটি ঘোষণা করেছে।

এটি একটি গুরুতর ঘটনা এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর শুনে মানুষ সহজেই আতঙ্কিত হতে পারে। তবে, বিষয়টির সঠিক গুরুত্ব বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, যে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ১৭,৩৯১ সুনিশ্চিত কেসের কথা জানা গেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ, ১৭,২৩৮ টি কেস চীনে।

চীনের এই ১৭,২৩৮ টি কেসের মধ্যে ২২৯৬ টি কেসকে গুরুতর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া, এ পর্যন্ত ৩৬১ জন মারা গেছে। (ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ পর্যন্ত, যে, সুনিশ্চিত কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০,৪০০ তে উপনীত হয়েছে এবং মৃত্যু-সংখ্যাও ৪২৫ এ পৌঁছেছে।)
বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে এটি পরিষ্কার যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের একটি বড় সংখ্যাই মৃত্যুবরণ করে নি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে।

এই হার ২০০২-৩ সালে প্রাদূর্ভাব হওয়া সার্স করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। সে-সময়ে ৮,০৯৮ টি কেসের মধ্যে ৭৭৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত্যুহার ছিল ৯.৬ শতাংশ।

ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্লোবাল বায়োসিকিউরিটির প্রফেসর রাইনা ম্যাকলিন্টিয়ার এর মতো বিশেষজ্ঞরা বলেন, অস্ট্রেলিয়ানদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, (৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র ১২ জন সুনিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত কারও মৃত্যু ঘটে নি।

তিনি দি ফিডকে বলেন,

“এই পর্যায়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই; কারণ, কমিউনিটিতে এটি এখনও বিস্তৃত হয় নি।”

“উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এটি ক্রমাগতভাবে চীনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি মহাদেশ ব্যাপী মহামারীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু, এটি মহামারীতে পরিণত হওয়ার কারণ নেই, এটি সার্স-এর সাথেও হয় নি, তাই আমাদেরকে এখনও নজর দিতে হবে সেসব ব্যবস্থা গ্রহণে যেন অস্ট্রেলিয়ায় এর বিস্তৃতি বিলম্বিত কিংবা রোধ করা যায়।”

“আমরা যতই এক্ষেত্রে বিলম্ব করবো, আমরা ততোই প্রতিষেধকের কাছাকাছি পৌঁছে যাব।”

করোনাভাইরাস যদি প্যানডেমিক-এ (কয়েকটি মহাদেশ ব্যাপী মহামারী) পরিণত হয়, প্রফেসর রাইনা ম্যাকলিন্টিয়ার সতর্ক করে বলেন যে, এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।

“তিন শতাংশ কেস ফ্যাটালিটি হার এবং সংক্রমণের উচ্চ হারের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এটি যদি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয় তাহলে গুরুতরভাবে অসুস্থ্য ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং আমাদের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করবে।”

সিজনাল ফ্লুর চেয়ে করোনাভাইরাসের কেস ফ্যাটালিটির হার বেশি (তিন শতাংশ)। এক্ষেত্রে সিজনাল ফ্লুর ফ্যাটালিটির হার হলো প্রায় ০.১ শতাংশ। ২০১৯ সালে ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৪৩০ অস্ট্রেলিয়ানের মৃত্যু হয়।

এসব ঝুঁকির কারণে করোনাভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তবে এসবের মাধ্যমে যেন অপ্রয়োজনীয় শঙ্কার সৃষ্টি না হয় সেটাও মনে রাখতে হবে।

যেমন, ফ্লুর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যা করতে পারে তা হলো অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান করতে পারে। এছাড়া, এর উপসর্গগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে পারে এবং ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারে।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 6 February 2020 1:54pm
By Sam Langford
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends