রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে বিপদজনক ভাসান চরে পাঠানোকে ‘অমানবিক’ বলল মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো

রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে একটি দ্বীপে স্থানান্তর করা ‘অনতিবিলম্বে’ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। এই পরিকল্পনাকে তারা ‘অদূরদর্শী এবং অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

Human rights groups urged have urged authorities in Bangladesh not to send Rohingya refugees to a dangerous low-lying island.

Human rights groups urged have urged authorities in Bangladesh not to send Rohingya refugees to a dangerous low-lying island. Source: AFP

বাংলাদেশে গত বৃহস্পতিবার কয়েক শ’ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করা শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, তাদের গন্তব্যস্থল ভাসান চর একটি নিচু দ্বীপ এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা-কবলিত স্থান।

সামরিক আগ্রাসনের কারণে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে পালিয়ে আসা প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের নোংরা শরণার্থী শিবিরগুলোতে।

এসব শরণার্থীর অনেকেই তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করা না হলে ফেরত যেতে অস্বীকার করেন। আর, আশ্রয় শিবিরগুলোতে মাদক-চক্র এবং চরমপন্থীদের তৎপরতার জন্য বাংলাদেশ সরকার এসব ক্যাম্প খালি করতে চাচ্ছিল।
বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার অন্তত ১০ টি বাস চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ এএফপি-কে বলেন,

“দশটি বাসে করে কম-বেশি ৪০০ জনকে দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য (চট্টগ্রামে) রওনা করা হয়েছে”।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ‘অনতিবিলম্বে’ রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে জাহাজে করে দ্বীপে পাঠানো বন্ধ করতে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে বলেন,

“কর্তৃপক্ষের উচিত ভাসান চরে আরও শরণার্থীর পুনর্বাসন করা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা।”

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সমর্থক-গোষ্ঠী রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই পরিকল্পনাটি ছিল ‘অদূরদর্শী এবং অমানবিক’। আর, প্রায় চল্লিশটি মানবাধিকার গোষ্ঠী বলেছে, এই পুনর্বাসন হয়তো ‘বল-পূর্বক ও অনৈচ্ছিকভাবে’ করা হচ্ছে এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে হবে।

সরকারের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শামছু দ্দৌজা বলেন, এই পুনর্বাসন ছিল স্বতঃপ্রবৃত্ত।

“তারা সেখানে খুশির সাথে যাচ্ছে। কাউকে জোর করা হয় নি। দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং সেখানে তাদের স্বস্তিপূর্ণ জীবন-যাপনের জন্য সরকার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, শরণার্থীদেরকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, কারণ, তাদেরকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আশা খুবই কম।

জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে বলেছে, পুনর্বাসন সম্পর্কে তাদেরকে ‘সীমিত তথ্য’ প্রদান করা হয়েছে এবং এর প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদেরকে জড়িত করা হয় নি।

কর্মকর্তারা বলেছে, চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবারে শরণার্থীদেরকে সেনাবাহিনীর বিমান-যোগে ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হবে।

এর আগে, কর্মকর্তারা এএফপি-কে বলেছিলেন, প্রথম পর্যায়ে তারা প্রায় ২,৫০০ লোককে এই নিচু পলি-দ্বীপটিতে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছেন।

এএফপি-র একজন প্রতিবেদক ঘটনাস্থল থেকে জানান, কক্সবাজার এলাকায় অপেক্ষমান অবস্থায় রয়েছে আরও অনেকগুলো বাস।
Rohingya refugees are being transported in a bus to Chittagong district from a refugee camp for the first mass relocation of refugees to an island.
Rohingya refugees are being transported in a bus to Chittagong district from a refugee camp for the first mass relocation of refugees to an island. Source: AFP
আরও বেশি সংখ্যক শরণার্থীকে বাসে তোলা হবে কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ তুলেছে যে, কোনো কোনো শরণার্থীকে জোর করে এই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত স্থানান্তরে রাজি করানো হচ্ছে।

ভাসান চরের আয়তন ৫২ বর্গকিলোমিটার। কয়েক দশক আগে এই পলি-দ্বীপটি জেগে উঠে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে। কমপক্ষে ১০০,০০০ (এক লাখ) রোহিঙ্গা শরণার্থী সেখানে বসবাস করতে পারবেন। আর, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন মিটার উঁচু বেড়িবাঁধও তৈরি করা হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, সম্প্রতি এবং কয়েক বছর আগেও সাগরের উঁচু ঢেউয়ে এই দ্বীপটি তলিয়ে গিয়েছিল। আর, এই অঞ্চলে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। তখন সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যায় ও ৪ থেকে ৫ মিটার উঁচু ঢেউ আসে।
Relatives of Rohingya refugees gather outside the transit camp before the start of relocation of refugees.
Relatives of Rohingya refugees gather outside the transit camp before the start of relocation of refugees. Source: AFP
বাংলাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘের অফিস থেকে বৃহস্পতিবার একটি সংক্ষিপ্ত ও লাগসই বিবৃতি প্রদান করা হয়। সেখানে বলা হয়, এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাদেরকে ‘জড়িত করা হয় নি’ এবং তাদেরকে ‘সীমিত তথ্য’ প্রদান করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দ্বীপটি মানুষের বসবাসের উপযোগী কি না এবং সেখানকার ‘নিরাপত্তা, সম্ভাব্যতা এবং টিকে থাকার সামর্থ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে জাতিসংঘকে সুযোগ দেওয়া হয় নি।

এতে আরও বলা হয় যে, শরণার্থীদেরকে পুনর্বাসনের বিষয়ে ‘অবশ্যই পর্যাপ্ত তথ্যসহ মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হবে’। তারা যখন সেখানে যাবেন, সেখানে তাদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং তারা যদি চান তাহলে তাদেরকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগও দিতে হবে।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 4 December 2020 2:24pm
Updated 4 December 2020 2:27pm
Presented by Sikder Taher Ahmad
Source: AFP, Reuters, SBS


Share this with family and friends