অর্গান ডোনেশন: অস্ট্রেলিয়ায় নয় ব্যক্তির জীবন রক্ষা করলেন একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী

সড়ক দুর্ঘটনায় একজন ভারতীয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে জীবন রক্ষা করা হয়েছে নয় জন অস্ট্রেলিয়ানের।

Indian student Rakshitha Mallepally

Indian student Rakshitha Mallepally transformed the lives of nine Australians through organ donation. Source: Rakshitha's family

হাইলাইটস

  • রক্ষিতা মল্লপল্লির অর্গান ডোনেশনের ফলে নয় ব্যক্তির জীবন রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশন সার্ভিস।
  • আন্তর্জাতিক এই শিক্ষার্থীর বাবা-মা প্রাথমিকভাবে এর বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তীতে তারা সম্মত হন।
  • ২৫ জুলাই – ১ আগস্ট ২০২১ অনুষ্ঠিত হবে ডোনেট লাইফ উইক।

গত বছরের শেষের দিকে মারা যান ভারতীয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রক্ষিতা মল্লপল্লি। তারা মা-বাবা বলেন,

“আমাদের মেয়ের মৃত্যুতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে, এখন আমরা আনন্দিত যে, তার মাধ্যমে অন্যদের জীবন রক্ষা পেয়েছে।”

২০ বছর বয়সী এই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ব্যাচেলর অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে পড়াশোনা করতেন। নিউ সাউথ ওয়েলসে এক মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে।

মৃত্যুর আগে হাসপাতালে যখন তিনি ইনডিউসড কোমায় ছিলেন, তখন ডাক্তাররা তার পরিবারকে অর্গান ডোনেশনের বিষয়ে পরামর্শ দেন এবং তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন।

তার বাবা ভেঙ্কটেশ এবং মা অনীতা রেড্ডি হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে, ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের কাছাকাছি বসবাস করেন। তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা অনেক কঠিন ছিল।

তাদেরকে উদ্ধৃত করে পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বলেন,

“আমরা যখন আমাদের মেয়ের সংবাদ শুনলাম, তখন প্রথমে আমরা ‘না’ বলেছিলাম। আমরা মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম এবং আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। আমাদের অন্তর খালি হয়ে গিয়েছিল।”
Indian student Rakshitha
Rakshitha (left) Source: Supplied
সেই পরিবারটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শ্রীনাথ জে ব্রহ্মপুরম-এর। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য তাদেরকে বোঝান। এসবিএস মালয়ালাম-কে তিনি বলেন,

“আমি তাদেরকে বলি যে, মৃত্যুর পরও রক্ষিতা বেঁচে থাকবে।”

রক্ষিতার বাবা বলেন,

“অর্গান ডোনেশন সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানতাম না। তবে, আমাদেরকে যখন এর তাৎপর্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা হয়, তখন আমরা অনুপ্রাণিত হই।”

“এখন আমি নিজেই একজন অর্গান ডোনার। এখন আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদেরকে অর্গান ডোনেশনে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।”

রক্ষিতা মল্লপল্লির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণ করেছেন সাত ব্যক্তি এবং দু’জন গ্রহণ করেছেন তার টিস্যু। নিউ সাউথ ওয়েলস অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশন সার্ভিস জানিয়েছে, তার অর্গান ডোনেশনে সব মিলিয়ে নয় ব্যক্তির জীবন রক্ষা পেয়েছে।
সংস্কৃত ভাষায় তার নাম ‘রক্ষিতা’-র অর্থ ত্রাণকর্তা। তাই তিনি অনেকের পরিত্রাতায় পরিগণিত হয়েছেন।
Indian student Rakshitha
Rakshitha as a baby with her father Source: Supplied

রক্ষিতার বাবা-মা বলেন, তাদের মেয়ে অনেক প্রাণ-চঞ্চল ছিলেন, তিনি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতেন। অস্ট্রেলিয়ায় কমিউনিটিতে অনুদান সংগ্রহ করে তার মৃতদেহ ভারতে পাঠানো হয়।


  • আনুমানিক ১,৭০০ অস্ট্রেলিয়ান বর্তমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমান তালিকায় আছেন।
  • আরও ১২,০০০ ডায়ালাইসিস-এর মাধ্যমে বেঁচে আছেন।
  • ২০১৯ সালে, ৫৪৮ জন মৃত ব্যক্তি এবং ২৩৯ জন জীবিত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ১,৬৮৩ ব্যক্তির।
  • প্রতি তিন জনে এক জন অস্ট্রেলিয়ান নিবন্ধিত ডোনার। তবে, বেশিরভাগ লোক (৬৯%) মনে করেন নিবন্ধন করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ পটভূমির লোকদের মাঝে অর্গান ডোনার সংখ্যা বৃদ্ধি

নিউ সাউথ ওয়েলস অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশন এর জেনারেল ম্যানেজার ড্যানিয়েল ফিশার বলেন,

“গত কয়েক বছরে ডোনেশন প্রদানের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ বলা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ পটভূমির লোকদের মাঝেও অর্গান ডোনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আমরা দেখছি।”

পরিবার যদি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বসবাস করে, সেক্ষেত্রে জটিলতা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন,

“আমাদের দলগুলো সেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা যদি ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী না হন, তখন দোভাষীরা সহায়তা করবেন যেন তাদেরকে বোঝানো যায় যে, কী ঘটেছে।”

“আলাপ-আলোচনা কালে এ রকমটি ঘটতে প্রায়ই দেখা যায়। তাদের প্রিয়জনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে সেটা পরিবারগুলোর জানা থাকাটা খুবই গুরুত্ব বহন করে। এর ফলে তাদেরকে অর্গান ডোনেশন কিংবা টিস্যু ডোনেশন সম্পর্কে বোঝানো সম্ভব হয় এবং অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হন।”

বহু-সাংস্কৃতিক কমিউনিটিগুলোতে পাওয়া যায়। ১৮ টি ভাষায় বহু-সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কমিউনিটিগুলোর জন্য এ রকম উপকরণ রয়েছে।
Organ donation.
Image copyright Catherine Lane 2015 Source: Getty Images/CatLane
২০১৬ সালে সিডনি-ভিত্তিক একটি ভারতীয়-অস্ট্রেলিয়ান পরিবার এগিয়ে আসে তাদের সন্তান ডিয়ানের অর্গান ডোনেট করার জন্য। সাত বছর বয়সী সেই শিশুটি মারা যায় তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধা ও রক্তক্ষরণের কারণে।

পরিবারটি নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল, ভারতীয় এবং অন্যান্য কমিউনিটিতে অর্গান ও টিস্যু ডোনেশনের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

ডিয়ানের বাবা রুপেশ উদানি বলেন,

“আমার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানুষে শুধুমাত্র এই বিষয়টি বোঝানো যে, অর্গান ডোনেশন কী এবং সমাজে এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ।”

“মানুষের কাছে গিয়ে এটা বলা যে, দেখুন, অর্গান ডোনেশন হলো সর্বোত্তম উপায়; কারণ, এর ফলে আপনি শুধু কারও জীবন রক্ষা করছেন না, আপনি তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদেরকেও দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা করছেন।”

এ বছরের ডোনেট লাইফ উইক পালিত হবে ২৫ জুলাই থেকে ১ আগস্ট ২০২১ তারিখে।
Follow SBS Bangla on .

Share
Published 26 January 2021 3:33pm
Updated 26 January 2021 3:37pm
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends