Feature

#মি টু আন্দোলনে সামিল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক আলফা আরজু

"তিনি ছিলেন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং সহকর্মী। কখনো ভাবিনি যে, তার কাছ থেকে আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হব," বলেছেন আলফা আরজু।

Me Too hashtag

হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন। Source: iStockphoto

নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন এবং হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান আন্দোলনের নাম হ্যাশট্যাগ মি টু (#MeToo)। যার ঢেউ আছড়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও। 

২০১৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন সাংবাদিক আলফা আরজু। গত ১৪ নভেম্বর ফেইসবুকে সাবেক সহকর্মী রেজাউল করিম লোটাসের বিরুদ্ধে হ্যাশট্যাগ মি টুতে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। রেজাউল করিম লোটাস বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এসবিএস বাংলার সাথে ফোনালাপে আলফা জানান, নির্দিষ্ট সময়টা মনে নেই। ২০১০ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১১ সালের শুরুর দিকের ঘটনা এটি। ঘটনার দিন কাজ শেষে আলফাকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন লোটাস। 

"বাসার কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ করেই আমার খুব কাছে চলে আসেন লোটাস। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আমার শরীরে অযাচিতভাবে (অশ্লীল) হাত দেয়া শুরু করে সে। হতবিহ্বল আমি নিজেকে বাঁচাতে প্রথমে খাঁমচি ও পরে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দেই তাকে। তার পরপরই সে যা করে... তা আমি মুখে আনতে পারব না," জানালেন আলফা। 

"বাংলাদেশে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের কাছে ডেইলি স্টার একটা স্বপ্ন। এ ঘটনার পর, আমি আমার স্বপ্নের কর্মস্থল থেকে অব্যহতি নেই। যোগ দেই ইংরেজী দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার তখনকার সম্পাদকসহ কাছের কিছু বন্ধুই শুধু জানেন এ ঘটনা।"

কর্তৃপক্ষকে জানাননি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলফা বলেন, "তখন যদি সম্পাদক বা অন্য কাউকে বলতাম, কেউই বিশ্বাস করত না। তারা ধরেই নিত আমার কোন সমস্যা আছে। এটাই আমাদের সমাজের টিপিক্যাল (গতানুগতিক) চিন্তা।"

"মি টু আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমার মনে হয়েছে এটাই মোক্ষম সময়। তাই ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে জানাই, এত বছর ধরে ভুগে যাওয়া ট্রমার (মানসিক আঘাত) কথা।"
Woman with note # Me Too
#মি টু আন্দোলন। Source: iStockphoto
অভিযোগের পরপরই, আলফাকে নানা ভয়ভীতি আর হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন লোটাস। তার ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আলফা আরজু। 

"আইনগত কি পদক্ষেপ নিব তা এখনও ঠিক করিনি। তবে যেহেতু আমার জীবননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তাই অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের দ্বারস্থ হবার চিন্তা করছি।"

আলফার অভিযোগের বিষয়ে জানতে রেজাউল করিম লোটাসের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, অভিযোগের পরপরই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার। ১৫ নভেম্বর রাতে পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একজন সহকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকজন সাবেক সহকর্মীর দেওয়া যৌন হয়রানির অভিযোগটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।

এরইমধ্যে পত্রিকাটির সিনিয়র ডেপুটি এডিটর আশা মেহরীন আমিনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। যাদের প্রত্যেকেই নারী।   

ফোনালাপে আশা আমিন বলেন, "তদন্ত চলছে। বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি আমরা।"
#ME Too
আলফা আরজুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার নোটিশ। Source: Facebook
অস্ট্রেলিয়ার পার্থে বসবাস করছেন আরেক নারী সাংবাদিক সাথিয়া খান। যিনি বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করেছেন বহুবছর। ফোনালাপে আলফা আরজুর সাহসিকতার প্রশংসা করেন তিনি। জানালেন, সাংবাদিকতা করা অবস্থায় তারও কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। 

"বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করার সময় নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে চলেছি। শুরুতে যাদের ফেরেশতা ভাবতাম, তাদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার পেয়েছি যা অপ্রত্যাশিত এবং হয়রানিমূলক। কাজের ছলে অনেকেই এমনভাবে গায়ে হাত রাখত, যার উদ্দেশ্য ছিল খারাপ," বলেছেন সাথিয়া।
বিদেশের মাটিতে হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ সালে। তবে আন্দোলনে হাওয়া লাগে ২০১৭ সালে, মার্কিন অভিনেত্রী অ্যালেইনা জেইন মিলানোর হাত ধরে। 

গত ক'দিনে বাংলাদেশে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার থেকে শুরু করে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ সুপরিচিত আবৃত্তিশিল্পীর বিরুদ্ধেও উঠেছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। যার শুরুটা হয়েছিল ৩০ অক্টোবর। এদিন ফেসবুকে প্রথম যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন মডেল ও সাবেক মিস আয়্যারল্যান্ড মাকসুদা আকতার প্রিয়তি। তারপর থেকে একে একে যোগ হয়েছে অনেক নাম।

Share
Published 19 November 2018 5:19pm
Updated 19 November 2018 10:56pm
By Hasan Tariq
Presented by Hasan Tariq
Source: SBS Bangla

Share this with family and friends