মাটির লবণাক্ততা কমিয়ে আনার প্রযুক্তির প্রতি বাংলাদেশি প্রতিমন্ত্রীর আগ্রহ

মাটির পুষ্টিমান রক্ষায় অস্ট্রেলিয়ার বাংলাভাষী শিক্ষাবিদদের করা একটি গবেষণার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপি। তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত মেলবোর্ন সফর করছেন। গত পহেলা নভেম্বর বেশ কয়েকজন গবেষক ও শিক্ষাবিদ প্রতিমন্ত্রীর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন এবং বাংলাদেশের ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদনশলতা নিয়ে তাদের গবেষণার বিষয়ে তাকে অবহিত করেন।

Farm workers

Source: Wikimedia Commons

সাক্ষাৎকালে পরিবেশ ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ এবং মেলবোর্ন পলিটেকনিকের শিক্ষক ও গবেষক ড. সাদিক আওয়াল তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন যে অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বে লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ভূমি ও মাটির উর্বরতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর জন্যে মুলত মানুষের কর্মকান্ডই দায়ী। বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের চিহ্ন আরো ব্যাপক। তার প্রমাণ সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলাগুলোর চিংড়ি চাষের এলাকাগুলোয় সুস্পষ্ট। লবনাক্ততা মাটির নিজস্ব উর্বরতা চিরতরে শেষ করে ফেলেছে। কোনো কারণে যদি এই ভূমিগুলোতে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এই ভূমিগুলোতে ধান, পাট বা আবাদী ফসলসহ কোনো কিছুই জন্মানো সম্ভব হবে না।
Bangladeshi community
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপির সাথে মেলবোর্ন প্রবাসী গবেষক ও শিক্ষাবিদদের সৌজন্য সাক্ষাৎ Source: Supplied
ড. সাদিকুল আওয়াল লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে জমির নিজস্ব উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার একটা সহজ সমাধান গবেষণা করে বের করেছেন। তার বেশকিছু গবেষণার ভিতর উল্লেখযোগ্য একটি গবেষণা হল “Reclamation of salt affected lands and changing the unproductive lands into highly productive resources” । তিনি বলছেন, অনেক কিছুতেই ব্যাপক পরিবেশ সমস্যা সংক্রান্ত সমাধান "Algal Technology” দিয়ে সম্ভব। Algal Technology দিয়েই অত্যন্ত সাধারনভাবে তিনি দেখিয়েছেন উচ্চ লবনাক্তর মাটির লবনাক্ততাও শুন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা সম্ভব। সেইসাথে মাটি তার নিজস্ব উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা ফিরে পাবে । মাটির পুষ্টিমান কোনো রকম সার বা কেমিক্যাল প্রয়োগ ছাড়াই অনেক উচ্চ স্তরে পৌছে যাবে। মাটি হবে অত্যন্ত উর্বর যেমন ছিল বহূবছর আগে। বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী ড. সাদিকুল আওয়ালের গবেষণার প্রতি উৎসাহের সাথে আগ্রহ প্রকাশ করেন ও তার গবেষণার উপর একটি প্রেজেন্টেশন বাংলাদেশ গিয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এই গবেষণা দেশের কল্যাণে অবদান রাখবে।

ভৌগলিক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও গবেষক ড. মাহবুবুল আলম অস্ট্রেলিয়াতে তার প্রায় দুই দশক কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশ ভৌগলিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জমি ডিজিটাইজেশন ও ডাটাবেজ তৈরি করে থাকে যেখানে জমির সমস্ত তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ জমি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ও নকশা ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদঘাটন করতে পারে। তিনি বলেন, এভাবে ভৌগলিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এতে জমিজমা-সংক্রান্ত জটিলতা ও দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষক বিশিষ্ট প্রান-পরিসংখ্যানবিদ জনাব মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। তিনি বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের সমকক্ষ করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যাবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।



Share
Published 4 November 2019 4:46pm
Updated 4 November 2019 4:52pm
By Shahan Alam

Share this with family and friends