সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ভালো বেড়েছে

ভারতের অংশে সুন্দরবনে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাঘ গণনার পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, একসঙ্গে ৮টি বাঘ বৃদ্ধির ঘটনা সুন্দরবনে এই প্রথম।

Royal Bengal / Indian Tiger (Panthera tigris)

Source: AAP/Mary Evans/Ardea/Jagdeep Rajput

ভারতে গত বছর সুন্দরবনের জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় ৫৭৮টি ক্যামেরা লাগিয়ে বাঘ গণনা শুরু করে সুন্দরবন বনদপ্তর এবং ব্যাঘ্র প্রকল্প। এই বাঘ গণনায় সাহায্য করেছিল ওয়াইল্ড লাইফ অর্গানাইজেশন,ডাবলু ডাবলু এফ। কাজে লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন বিদেশি প্রযুক্তির। আর তার ফলে বাঘের মোটামুটি একটি সঠিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে,সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ৮টি। শেষ পরিসংখ্যানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮টি। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৯৬টি। বাঘ গণনায় একসঙ্গে ৮টি বাঘ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা সুন্দরবনের ইতিহাসের এই প্রথম। স্বভাবতই দাবি করা হচ্ছে, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

ভারত আর বাংলাদেশে মিলিতভাবে সুন্দরবনের অবস্থান। সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকা বাংলাদেশে অবস্থিত। ফলে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের দিক থেকে বাঘ ভারতে যেমন ঢুকে পড়ে তেমনই ভারতের বাঘও বাংলাদেশের জঙ্গলে যাতায়াত করে, তারও প্রমাণ পেয়েছে বনদপ্তর।অভিযোগ, বাংলাদেশের দিক দিয়ে আগে বন্যপ্রাণী চোরাকারবারীরা ঢুকে পড়ত সুন্দরবনের জঙ্গলে। ইদানীং বনদপ্তরের নজরদারিতে তা অনেকটাই কমেছে। দাবি করা হচ্ছে, চোরা শিকারিদের উপরে নজরদারি ফলেই বেড়েছে বাঘের সংখ্যা।

সুন্দরবনে ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা ড. সুধীর চন্দ্র দাস বলেছেন, সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হল সুন্দরবন বাঘের উপযুক্ত আবাসস্থল এবং বাঘেরা নিরাপদে আছে। তাছাড়া প্রতিটি বাঘের হ্যাবিচুয়াল অ্যাকশন, সেটিও সুন্দরবনে দারুণভাবে কার্যকারী হচ্ছে। ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেছেন, সুন্দরবনের জঙ্গলে নেট ফেন্সিং দেওয়ার কারণে জঙ্গলের বাঘ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। এর ফলে বাঘের মৃত্যুর হার যেমন একদিকে কমেছে, তেমনই জঙ্গলে যথেষ্ট পরিমাণে খাবারেরও যোগান বেড়েছে। প্রতিটা নদীতে বা খাঁড়িতে বনদপ্তরের ই-পেট্রোলিং চালু হওয়ার কারণে বাঘ পাচারকারীও কমেছে।
Royal Bengal / Indian Tiger (brothers) - on the hill-top (Panthera tigris)
Source: AAP/Mary Evans/Ardea/Jagdeep Rajput
ঘটনা হলো সুন্দরবনে প্রায় দু’মাস ধরে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের গণনা চলেছে। বিভিন্ন নদী ও খাঁড়িতে বসানো হয়েছিল এই ক্যামেরা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় যেমন ক্যামেরা বসিয়ে গণনা হয়েছিল, তেমনই গণনা করা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন সংলগ্ন এলাকায়। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হয়েছিল টাইগার প্রজেক্ট এলাকায় ক্যামেরার সাহায্যে বাঘ গণনার কাজ। তারপর ২২ জানুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন্য এলাকায় বাঘ গণনা। ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবিগুলি নিয়ে যথেষ্ট হিসাবনিকাশ করে তারপরেই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর। এই পুরো কাজটা হয়েছে দেরাদুন থেকেই।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সুন্দরবনের বাঘ বাড়ার ঘটনা সত্যিই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সংখ্যাটা পরবর্তীতে যাতে সেঞ্চুরি অতিক্রম করে যায় তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুন্দরবনের বাঘ বাড়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে,সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা যথেষ্ট সুরক্ষিত। সুন্দরবনের ৪ হাজার ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাঘের বিচরণ-ক্ষেত্র আছে। বাঘ বাড়াতে গেলে আগামী দিনে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল বাড়াতে হবে, মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 7 May 2020 4:06pm
Updated 7 May 2020 4:08pm
By Partha Mukhopadhyay
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends