কাওয়াসাকি রোগটি কি করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত?

শিশুদের মাঝে একটি নতুন অটো-ইমিউন রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। কাওয়াসাকি নামের এই রোগটির সঙ্গে কি করোনাভাইরাসের কোনো যোগসূত্র রয়েছে? অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা কি এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে? এসব খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

Coronavirus

The federal government has called on health authorities to look into a new inflammatory disease found in kids who have tested positive for COVID-19 Source: ABACA

অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় কাওয়াসাকি রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতি ফেডারাল সরকার আহ্বান জানিয়েছে করোনাভাইরাসের সঙ্গে এর রহস্যময় যোগসূত্র উদঘাটন করার জন্য। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কে তিন শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।

কাওয়াসাকি একটি বিরল রোগ। এর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে PIMS-TS নামের একটি অটো-ইমিউন রোগের সঙ্গে, যা সাধারণত শিশুদের মাঝে দেখা যায় এবং সে-সব অঞ্চলে দেখা যায় যেখানে কোভিড-১৯ উচ্চ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম ৭৩টি কেসের রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতেও শিশুদের মাঝে এ রোগটি দেখা গেছে।
Chief Medical Officer Professor Paul Kelly.
Chief Medical Officer Professor Paul Kelly. Source: AAP
অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার পল কেলি বুধবার এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন,

“অস্ট্রেলিয়াতে কাওয়াসাকির বৃদ্ধি সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি এবং এই PIMS-TS এরও কোনো কেস নেই।”

কাওয়াসাকি অতি বিরল একটি রোগ। এটি প্রায়শই আরোগ্যযোগ্য। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য-কর্মীরা এ বিষয়ে উচ্চ মাত্রায় সতর্ক রয়েছেন।

আর, PIMS-TS ও করোনাভাইরাসের মাঝে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে কাজ করছেন তারা।

কাওয়াসাকি রোগ এবং PIMS-TS কী?

কাওয়াসাকি রোগ একটি বিরল প্রদাহজনিত অবস্থা যা শিশুদের মাঝে দেখা যায়। এর ফলে শরীরের রক্তবাহী শিরাগুলোর দেয়ালে প্রদাহ হয়।

১৯৬৭ সালে এই রোগটি প্রথম রিপোর্ট করেন জাপানের শিশুরোগ-চিকিৎসকরা। এক বা একাধিক সংক্রমণের প্রতি শিশুর ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত-প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের কারণে সাধারণত এই রোগটি হয়।

মেলবোর্নের মার্ডক চিলড্রেন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পিডিয়াট্রিক অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের চিকিৎসক প্রফেসর ডেভিড বার্গনার বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত প্রতিবছরে কাওয়াসাকি রোগের প্রায় ৩০০ টি কেস দেখা যায়।

তিনি বলেন,

“শিশুরোগ-চিকিৎসক হিসেবে আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাওয়াসাকি রোগ দেখতে পাই। তবে, আমরা এখনও জানি না কেন এটি হয়।”

“সাধারণত শুরুতেই চিকিৎসা করা হলে বেশিরভাগ শিশুই পরিপূর্ণভাবে আরোগ্য লাভ করে।”

কাওয়াসাকি রোগের উপসর্গ হচ্ছে চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি, রক্ষ-চক্ষু, তীব্র জ্বর, অস্থি-সন্ধিতে ব্যথা এবং হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া।

প্রফেসর বার্গনার বলেন,

“কাওয়াসাকি রোগ ও PIMS-TS এর মাঝে কিছু মিল থাকলেও” এগুলোর মাঝে বিশেষ ধরনের পার্থক্যও রয়েছে।
Dr David Burgner
Prof David Burgner, a paediatric and infectious diseases doctor, says there is no definitive link between COVID-19 and Kawasaki disease. Source: Murdoch Children's Research Institute
তিনি বলেন,

“এই নতুন উপসর্গ-ওয়ালা রোগীরা আক্রান্ত হলে তাদের রক্তচাপ কমে যায়, আর তাদের হৃৎপিণ্ডের পেশী ভালভাবে সংকুচিত হতে পারে না।”

“এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ হলো, রোগীর তীব্র অ্যাবডমিনাল পেইন হয় এবং টক্সিকশক সিনড্রোমও দেখা দেয়।”

“কাওয়াসাকি রোগের সাথে এর সুনিশ্চিতভাবেই অনেক মিল আছে। তবে PIMS-TS আক্রান্ত শিশুদেরকে অনেক বেশি অসুস্থ দেখায়।”

করোনাভাইরাসের সঙ্গে কাওয়াসাকি রোগ এবং PIMS-TS এর কোনো যোগসূত্র আছে কি?

প্রফেসর বার্গনার বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে কাওয়াসাকি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এ রকম কথা বলার মতো কোনো পরিষ্কার তথ্য নেই।

যেক্ষেত্রে PIMS-TS ও করোনাভাইরাসের মধ্যকার যোগসূত্র প্রমাণ করা যায় না, সেক্ষেত্রে প্রফেসর বার্গনার বলেন, এই সম্ভাবনাটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন,

“দৃশ্যত বহু রকমের সংক্রমণ রয়েছে যেগুলোর কারণে কাওয়াসাকি রোগের সৃষ্টি হতে পারে। PIMS-TS রোগটি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ অনুসরণ করে বলে মনে হচ্ছে। তাই তুলনামূলকভাবে এটি সুনির্দিষ্ট মনে হচ্ছে।”
“যাহোক, এটি অনেক অনুমানমূলক কথা। কারণ, এই মুহূর্তে কেস সংখ্যা অনেক কম। তাই, কোনো উপসংহারে পৌঁছানো এখনও অনেক কঠিন।”

“এটি অনেক বিরল ও জটিল সংক্রমণ এবং তুলনামূলকভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বিরল। এমনকি যেসব অঞ্চলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন অনেক বেশি, সেখানেও। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যে। সৌভাগ্যবশত অস্ট্রেলিয়ায় সে রকম অবস্থা এখনও আসে নি। তাই আমি আশা করি এ রকম কেস অনেক কম হবে।”

অস্ট্রেলিয়ার শিশুদের কি ঝুঁকি রয়েছে?

অস্ট্রেলিয়ার চিফ মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডান মারফির মতে, কাওয়াসাকি রোগ কিংবা PIMS-TS নিয়ে বাবা-মায়েদের চিন্তার কিছু নেই।

প্রফেসর মারফি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত সফল হয়েছে। এমতাবস্থায় এখানে PIMS-TS এর অনেক কেস দেখা দিলে তিনি বিস্মিত হবেন।

তিনি বলেন,

“অন্যান্য যে-সব দেশে বৃহৎ-সংখ্যক সংক্রমিত ব্যক্তি রয়েছে, সেসব দেশে এটা দেখা দিতে পারে। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় এটা যেহেতু অনেক বিরল তাই অস্ট্রেলিয়ায় এটার প্রাদূর্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা কম।”

“আমরা এটা নিয়ে সতর্ক এবং আমরা পরিষ্কারভাবে এটার প্রতি নজর রাখছি।”
প্রফেসর বার্গনার বলেন, অন্যান্য দেশের রিপোর্টগুলো দেখে বাবা-মায়েদের “প্রভাবিত হওয়া” উচিত হবে না।

“কাওয়াসাকি রোগ কিংবা PIMS-TS বিষয়ক কোনো নতুন পরামর্শ পায় নি সরকার। আর, আমি মনে করি, তা পুরোপুরিই যথাযথ।”

“বাবা-মায়েদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তবে, তাদের উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত হওয়া ঠিক হবে না।”

“অস্ট্রেলিয়ায় কোনো শিশুর PIMS-TS এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম; যদিও তা অসম্ভব নয়। আমাদেরকে অবশ্যই এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।”


alc covid domestic violence bangla
Source: SBS
অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জন-সমাগমের সীমা সম্পর্কে জানতে আপনার রাজ্যের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখুন।

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা এখন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে। আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।

alc covid shopping bangla
Source: SBS


আপনার মোবাইল ফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ফেডারাল সরকারের করোনাভাইরাস ট্রেসিং অ্যাপ COVIDSafe ডাউনলোড করা যাবে।

আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।

আপনার ভাষায় কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ আপডেট জানাতে এসবিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পাবেন। ভিজিট করুন: .
alc covid mental health bangla
Source: SBS
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন:

alc covid ramadan bangla
Source: SBS
Follow SBS Bangla on .


Share
Published 14 May 2020 4:33pm
By Nick Houghton
Presented by Sikder Taher Ahmad
Source: SBS


Share this with family and friends