“একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি যেমন গর্বিত, তেমন একজন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবেও আমি গর্বিত”

Attendees of the Australia Day parade in Melbourne in 2019

Attendees of the Australia Day parade in Melbourne in 2019. Source: AAP

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ডে পালন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবাই এই দিনটিতে অস্ট্রেলিয়া ডে উদযাপনের পক্ষপাতী নন। কেউ কেউ মনে করেন এই দিনটি আসলে অ্যাগ্রেসন ডে বা আগ্রাসনের দিন, উপনিবেশ স্থাপনের দিন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত ব্যক্তিদের মধ্যে একটি বড় অংশই এসেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে। এদের অনেকেই দ্বৈত নাগরিক। বহু-সাংস্কৃতিক এই দেশটির নাগরিকরা অস্ট্রেলিয়া ডে নিয়ে কী ভাবছেন? কয়েকজন বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়ান কথা বলেছেন এসবিএস বাংলার সঙ্গে।


২০২০ সালে বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়ান হওয়া আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?

কমিউনিটি নেতা ও সমাজকর্মী মাহফুজুল হক চৌধুরী (খসরু) অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে অবদান রাখতে পারার কারণে তিনি খুশি। চলমান বুশফায়ারে বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, বলেন তিনি। তারা এ জন্য তহবিল সংগ্রহ করার জন্যও কাজ করছেন।

২০২০ সাল ভালভাবে কাটুক, তিনি এটাই কামনা করেন। তিনি বলেন,

“২৬ জানুয়ারি যে দিনটা, আমার কাছে সে দিনটাকে আমি মনে করি যে বাঞ্চ অফ পিপল, যাদেরকে আমি হৃদয় থেকে স্মরণ করি, সে অ্যাবোরিজিনালদেরকে আমি প্রথমে স্মরণ করি। দ্বিতীয়ত আমি স্মরণ করি, যে বাঞ্চ অফ পিপল ২৬ জানুয়ারি আসছিল অস্ট্রেলিয়াতে এবং তারা আসাতে আমাদের এই অস্ট্রেলিয়ার কান্ট্রিকে তারা ডেভেলপের জন্য অনেক কিছু তারা করছে। সে জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”

“পরবর্তীতে ডে-বাই-ডে যারা পৃথিবী থেকে অনেক লোকজন এদেশে আসছে এবং অস্ট্রেলিয়ান গভার্নমেন্টও আমাদেরকে সুযোগ করে দেয় এবং আমরাও অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতায় সবসময় আমরা বাংলাদেশী কমিউনিটি থাকি এবং আজীবন থাকবো।”
মাহফুজুল হক চৌধুরী (খসরু)
মাহফুজুল হক চৌধুরী (খসরু) Source: Supplied
মোহাম্মদ সাত্তার খাজা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন,

“বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আমি নিজেকে খুবই প্রাউড ফিল করি।”

মোহাম্মদ আলমগীর শাহ একজন চাকরিজীবি। তিনি বলেন,

“বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান হওয়ায় আমি গর্বিত। অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি মাল্টি-কালচারাল দেশে এসে এদেশের অসাম্প্রদায়িক সমাজ-ব্যবস্থা আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি যেমন গর্বিত, তেমন একজন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবেও আমি গর্বিত।”

“এদেশে আমার জন্ম না হলেও এদেশের সকল সুযোগ-সুবিধা আমি ভোগ করতে পারছি। ভিন্ন একটি দেশে এসে ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাস করে আমি আমার নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে একটুও দূরে যাই নি। আমরা এখানে বৈশাখী মেলা করছি, ঈদ উদযাপন করছি। এখানে বাঙালি হিন্দুরা, খ্রিস্টানরা যে যার ধর্ম অনায়াসে পালন করছে।”

“এক অর্থে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমার শেকড়কে লালন করতে কোনো বাধা দেওয়া হয় না বরং উৎসাহিত করা হয়।”

“আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ এবং এই আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়াকে সমানভাবে ভালবাসি।”

আব্দুল জলিল একজন সংগঠক ও ক্যাম্পবেলটাউন বাংলা স্কুলের সভাপতি। তিনি বলেন,

“বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান হওয়া, আমি আসলে সবসময়ই এটার জন্য গর্বিত।”

“অস্ট্রেলিয়ান যে সমাজ-ব্যবস্থা বা সামাজিক বিভিন্ন সংস্কৃতির সমাজ-ব্যবস্থা, সেটা দেখে, সেটা উপভোগ করে, তার সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমি আনন্দিত।”
মোহাম্মদ আলমগীর শাহ
মোহাম্মদ আলমগীর শাহ Source: Supplied

২৬ জানুয়ারি-কে আপনি কীভাবে দেখেন? কেন?

কমিউনিটি নেতা ও সমাজকর্মী মাহফুজুল হক চৌধুরী (খসরু) বলেন,

“অস্ট্রেলিয়া ডে-তে আমরা অনেকে বাসায় গ্যাদারিং করি এ দিন উপলক্ষে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে আমরা একটা গ্যাদারিং করে সেখানে আলোচনা করি। সেখানে খাওয়া-দাওয়া হয়। আবার অনেকেই আমরা বার্বিকিউ পার্টি করি, পার্কে যাই এই দিনটাতে। অনেকে আবার লং উইক-এন্ডে হলিডেতেও যায়।”

“যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দের সাথে আমরা এই দিনটাকে পালন করি।”

মোহাম্মদ সাত্তার খাজা বলেন, ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ডে নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। অস্ট্রেলিয়ার একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ২৬ জানুয়ারিকে তিনি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করেন। তিনি বলেন,

“২৬ তারিখটা একটি ন্যাশনাল ডে, গভার্নমেন্ট যেটা স্বীকার করে, আমরাও সেটা সেভাবে পালন করি। যদিও এখানে সামান্য কিছু বিতর্ক আছে। আমরা সেটার সঙ্গে একমত নই। আমরা সেটাকে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ডে হিসেবেই পালন করতে চাই ২৬ তারিখে।”

মোহাম্মদ আলমগীর শাহ বলেন,

“আসলে ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ডে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভিন্ন মত রয়েছে। এ নিয়ে কিন্তু আমি একজন বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে সরকারীভাবে ঘোষিত এই দিনটিকে পালন করি এবং সরকার যতদিন ২৬ জানুয়ারিকে অস্ট্রেলিয়া ডে হিসেবে মানবে ততোদিন আমি তা অনুসরণ করবো।”

“আমি যেমন বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো পালন করি, শ্রদ্ধা করি, তেমনভাবে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দিবসগুলি সমভাবে পালন করি।”

আব্দুল জলিল বলেন,

“২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ডে, এটা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার স্টোরি ডে। মানে হচ্ছে এখানে সমগ্র অস্ট্রেলিয়ানদেরই এখানে একটা ইতিহাস আছে, স্টোরি আছে, গল্প আছে এবং এইগুলো সমস্ত অস্ট্রেলিয়ানদের যার যার প্রেক্ষাপট, যার যার অবস্থান থেকে যে স্টোরিগুলো সেগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করা এবং অন্যের সাথে নিজের সুখ-দুঃখ, নিজের ভাললাগা, ভালবাসা, নিজের সংস্কৃতিকে শেয়ার করাই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ডের মূল কথা এবং আমিও সেটাই সেই লক্ষ্যেই অস্ট্রেলিয়া ডে-কে দেখি।”
মোহাম্মদ সাত্তার খাজা
মোহাম্মদ সাত্তার খাজা Source: Supplied

আপনার সম্প্রদায় অস্ট্রেলিয়া ডে কীভাবে পালন করে?

মোহাম্মদ সাত্তার খাজা বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অনেকগুলো সংগঠন আছে। তারা বিভিন্নভাবে অস্ট্রেলিয়া ডে পালন করে থাকে।

মোহাম্মদ আলমগীর শাহ বলেন,

“এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটি অস্ট্রেলিয়া ডে নানান আয়োজনের মধ্যে পালন করে।”

আব্দুল জলিল বলেন, অনেকগুলো সংগঠন আছে আমাদের।

“সাংগঠনিকভাবে আমি সিডনিতে কাউকে এখনো দেখি নাই যে, অস্ট্রেলিয়া ডে স্পেসিফিক্যালি এটাকে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠীগতভাবে এটাকে বিভিন্নভাবে সেলিব্রেট করছেন।”

“অস্ট্রেলিয়া ডে-কে সামনে রেখে আমরা এই বুশফায়ারে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে আমরা অনেকটা তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সুযোগ পাব।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশীরা বিভিন্নভাবে অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ডে পালন করে থাকে।
আব্দুল জলিল।
আব্দুল জলিল। Source: Supplied
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share