নির্বাচন ২০২২: দি লিবারাল পার্টি

Sir Robert Menzies is installed as Warden of the Cinque Ports, during a ceremony at Dover, England, 20th July 1966

Sir Robert Menzies is installed as Warden of the Cinque Ports, during a ceremony at Dover, England, 20th July 1966 Source: Getty

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

নির্বাচন পূর্ববর্তী ইলেকশান এক্সপ্লেইনার সিরিজের অংশ হিসেবে এবারে রয়েছে: দি লিবারাল পার্টি।


অস্ট্রেলিয়ার লিবারাল পার্টির ওপর স্যার রবার্ট মেনজিসের চেয়ে বেশি আর কারও প্রভাব নেই বলেই ধারণা করা হয়।

খুব কম অস্ট্রেলীয়ই এই সাবেক লিবারাল প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছেন, অথবা জাতির ওপরে এত বেশি প্রভাব রাখতে পেরেছেন।

এই দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি, এবং অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা নেতাও তিনি। তাই বলা যায় লিবারাল পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর নাম উদ্ধৃত হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।
স্যার রবার্ট গর্ডন মেনজিস ভিক্টোরিয়া রাজ্যের জেপারিটে ১৮৯৪ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।

প্রথমবারে ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪১ এবং দ্বিতীয়বারে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দুইবারে মোট ১৮ বছর পাঁচ মাসের প্রধানমন্ত্রীত্ব তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

১৯৩৯ সালে যখন ইউরোপে যখন যুদ্ধের হুমকি ক্রমশ বাড়ছিল, সেই সময়ে অধুনালুপ্ত ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টির হয়ে তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত লিবারাল পার্টি-র প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯০১ সালের ইমিগ্রেশান রেস্ট্রিকশান এক্ট-এরও তিনি খুব জোরালো সমর্থক ছিলেন, সাধারণত যেটি ‘হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া পলিসি’ নামে বেশি পরিচিত।
আরেকজন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেন ম্যালকম ফ্রেজার, যিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত লিবারাল নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার একটি অন্যতম কুখ্যাত রাজনৈতিক ঘটনা থেকে তিনি সরাসরি লাভবান হয়েছিলেন।

বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তিনি ১৯৭৫ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরের সিনেটে লেবার দলীয় প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটল্যামের বাজেট বিল আটকে দিয়েছিলেন।

এর ফলে গভর্নর জেনারেল স্যার জন কার ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে গফ হুইটল্যামের কমিশনকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ম্যালকম ফ্রেজারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তী নির্বাচনেই ফ্রেজার বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।

আর যদিও ম্যালকম ফ্রেজার অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ঠ রক্ষণশীল ছিলেন, কিন্তু সামাজিকভাবে তাঁকে বেশ প্রগতিশীল মনে করা হতো।

তাঁর সরকার ‘পারিবারিক আদালত’ বা ফ্যামিলি কোর্ট-এর মত বেশ কিছু সংস্কারধর্মী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল, যেগুলো আসলে লেবার সরকারের শুরু করা। ফ্রেজার সরকার স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বা এসবিএস প্রতিষ্ঠা করে এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কিছু অংশকে মেরিন পার্ক হিসাবে ঘোষণা করে।

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন আরেকজন লিবারাল নেতা।

১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জন হাওয়ার্ড। তিনি পোর্ট আর্থার গণহত্যার পরে কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেন, এবঅরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার কমিশন বিলুপ্ত করেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্যে অফশোর প্রসেসিং সিস্টেম প্রবর্তন করেছিলেন।

জন হাওয়ার্ড ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পরে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে যুক্ত করেছিলেন।

কিন্তু ২০০৭ সালের নির্বাচনে কেভিন রাডের লেবার পার্টির কাছে জন হাওয়ার্ড হেরে গেলে অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বের জগতে এতদিনকার মেঞ্জিস ও হাওয়ার্ড যুগের স্থিতিশীলতা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রধান দুটি দলের নেতৃত্বের জায়গায় অস্থিতিশীলতা শুরু হয়।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে টনি এবট-ই আবার কোয়ালিশনকে সরকারের নেতৃত্বে নিয়ে আসেন।

কিন্তু টনি এবটকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদচ্যুত করা হয়। এটি কোনও নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটেনি বরং দলীয় অভ্যন্তরীন নেতৃত্ব নিয়ে করা ম্যালকম টার্নবুলের চ্যালেঞ্জের কারণে এরকমটা হয়েছিল।

আবার ম্যালকম টার্নবুল নিজেও ২০১৮ এর আগস্ট মাসে আরেকটি চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে লিবারাল নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান।

হোম এফেয়ার্স মিনিস্টার পিটার ডাটনের করা এই চ্যালেঞ্জ দলের নেতৃত্বে দুটি ধারার সৃষ্টি করে।

পিটার ডাটনের করা প্রথম চ্যালেঞ্জে টার্নবুল জিতে গেলেও তৎকালীন ট্রেজারার স্কট মরিসনের করা দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জে তিনি পরাজিত হন। তার ফলে স্কট মরিসন লিবারাল নেতা হিসাবে ২০০৭ সালের পরে অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অধিষ্ঠিত হন। মাত্র দুই সরকারের মেয়াদে তিনি হলেন অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।

তারপরে ২০১৯ এর নির্বাচনী প্রচারণায় বিল শর্টেনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির বিরুদ্ধে স্কট মরিসনই তার জোটকে জয়ের দিকে পরিচালিত করেন।

সব পরিসংখ্যান ও নির্বাচনবোদ্ধারা ধারণা করেছিল যে লেবার পার্টিই জিতবে। এবং প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সম্ভবত তার দলের নেতৃত্ব নিয়ে যে অভ্যন্তরীন কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে, তার ক্ষতিকর প্রভাব ঠিকমত কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

কিন্তু স্কট মরিসন এবং লিবারাল পার্টি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে। ছয় বছর ধরে লেবার পার্টির নেতৃত্ব দেয়া বিল শর্টেনের ওপর ভোটাররা ভরসা রাখেনি।

মরিসনের জন্যে এটি একটি দারুণ বিজয় ছিল।

স্কট মরিসন নেতৃত্বে আসার পর থেকে সমলৈঙ্গিক বিবাহ বা সেম-সেক্স ম্যারেজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত বিষয়গুলিতে দলটির নিজস্ব পরিমন্ডলে কিছু অস্থিরতা ও উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়।

ডক্টর পিটার চেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এন্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশানস-এর একজন সিনিয়র লেকচারার।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই লিবারাল পার্টি অস্ট্রেলীয় সমাজের বিভিন্ন ধারার একটি সংমিশ্রণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, যেসব ধারার উৎপত্তি বিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে।

ডক্টর চেন আরও বলেন, ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি এর নেতৃত্বে বড়সড় বিভাজনের অস্তিত্ব বয়ে নিয়ে চলেছে।

যদিও এটিকে তিনি খুব গুরুতর কোনও সমস্যা হিসাবে দেখেন না, তবু তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে দলের ঐক্যবদ্ধতা এবং নেতৃত্বের বিষয়ে এই বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করাটা দলটির জন্যে বেশ জরুরি। 


এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share