জলবায়ুর যেসব নিয়ামক দ্বারা অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া নির্ধারিত হয়

el nino

Source: Getty Images/JUAN GAERTNER/SCIENCE PHOTO LIBRARY

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া জলবায়ুর বিভিন্ন নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এল নিনো আর লা নিনা। দেশের বৃহৎ অংশজুড়ে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু নিয়ে এবারের সেটলমেন্ট গাইড প্রতিবেদন।


এল নিনো ( El Niño) এবং লা নিনা (La Niña ) বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার অংশ হিসাবে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে থাকে।

লা নিনার সময়ে অস্ট্রেলিয়ার একটা বৃহৎ অংশ জুড়ে যে পরিমান বৃষ্টিপাত হয়, সচরাচর তা হয় না। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরভাগে (ইস্টার্ন এন্ড নর্দার্ন ইনল্যান্ড) বন্যা দেখা দেয় যাকে। পক্ষান্তরে এল নিনোর সময়ে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়।

অস্ট্রেলিয়া সহ এই অঞ্চলের জলবায়ুর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে প্রফেসর স্কট পাওয়ার বলেন, উক্ত সকল প্রাকৃতিক ঘটনাবলি একটি প্রাকৃতিক ঘটনাচক্রের অংশ হিসাবে ঘটে থাকে যাকে দক্ষিণস্থ পর্যাবৃত্ত চক্র বা এনসো (ENSO) অর্থাৎ, El Niño-Southern Oscillation বলা হয়ে থাকে।
el nino
During an El Niño event, trade winds weaken, allowing the area of warmer than normal water to move into the central and eastern tropical Pacific Ocean. Source: Reproduced with the permission of the Bureau of Meteorology.

প্রফেসর স্কট ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের সেন্টার ফর এপ্লাইড ক্লাইমেট সায়েন্সের পরিচালক। এছাড়াও তিনি মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ আর্থ, এটমোস্ফিয়ার এন্ড এনভাইরনমেন্টের এডজাঙ্কট প্রফেসর।

প্রফেসর পাওয়ার জানান, বিভিন্ন কারণে যখন প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের জলবায়ুর তারতম্য ঘটে তখনই এল নিনো বা লা নিনা দেখা দেয়। লা নিনা হচ্ছে পর্যাবৃত্ত চক্রের এল নিনোর সম্পূর্ন বিপরীত অবস্থা।

এল নিনো আর লা নিনা পর্যায়ের মাঝখানে পড়েছে নিরপেক্ষ অবস্থা। নিরক্ষরেখা বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা (Equatorial Pacific SeaSurface Temperatures -SST) গড় মানের থাকলে এই অবস্থা বিরাজ করে।
ENSO diagram
Pacific Ocean – even in neutral state the Western Pacific is warm. Source: Reproduced with the permission of the Bureau of Meteorology.
অবশ্য কখনো কখনো সাগরে লা নিনা বা এল নিনো অবস্থা চলাকালে বায়ুমন্ডলের ভিন্ন অবস্থা বা বিপরীত অবস্থা দেখা যেতে পারে।
এনসো পর্যাবৃত্ত চক্রে মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলের মিথস্ক্রিয়ায় পর্যায়গত তারতম্য দেখা দেয়। একে মহাসাগর-ভূমন্ডলের যুথবদ্ধ ঘটনাচক্র বা coupled ocean–atmosphere phenomenon বলা হয়।

অবশ্য এই পর্যায়বৃত্ত চক্র খুবই অনিয়িমতভাবে ঘটে থাকে বলে জানান প্রফেসর পাওয়ার। নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলবায়ু অস্থিতিশীল হওয়ার কারনে পর্যায়বৃত্তিক ঘটনাচক্রের সূত্রপাত ঘটে।
La Nina
During a La Niña event, the Walker Circulation intensifies with greater convection over the western Pacific and stronger trade winds. Source: Reproduced with the permission of the Bureau of Meteorology
অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অফ মেটেরিওলজি (Australian Bureau of Meteorology-BOM) দক্ষিণস্থ পর্যাবৃত্ত চক্রের বিভিন্ন পর্যায় ও জলবায়ুর সূচক পর্যবেক্ষন করে থাকে। সংস্থাটি এই অঞ্চলের জলবায়ু ও আবহাওয়ার উপাদান ও নিয়ামক বা প্রভাবকসমূহকে পর্যবেক্ষন করে থাকে যেমন স্বল্পকালীন গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টির ধরণ, সাগরের উপরিভাগ ও তলদেশের পানির তাপমাত্রা, দক্ষিণস্থ পর্যাবৃত্ত সূচক, বায়ুমন্ডলের বায়ুর চাপ, মেঘ ও বৃষ্টির গঠন, বাণিজ্য বায়ু ও সাগরের স্রোত।

এবারে দক্ষিণস্থ পর্যাবৃত্ত সূচক ব সাউদার্ন অসিলেশন ইনডেক্স নিয়ে কিছু আলাপ করা যাক।

ব্যুরো অফ মেটেরিওলজির অপারেশনাল ক্লাইমেট সার্ভিস দলের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ডক্টর লিনেট বেটিও জানান, সাউদার্ন অসিলেশন ইনডেক্সের মাধ্যমে তাহিতি ও ডারউইনের মধ্যকার ভূমির বায়ুর চাপ ও তাদের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়।

যদিও অস্ট্রেলিয়ার বড় ধরনের খরার জন্য এল নিনোকে দায়ী করা হয়, তবে কেবল এল নিনোর কারনেই খরা হয় — এমনটা বলা যায় না।
Cloudy sky: Getty Images/Andrew Merry
Source: Getty Images/Andrew Merry

তবে ২০১৯ সালের অস্ট্রেলিয়া ব্যাপী ধ্বংসাত্মক দাবানল বা বুশফায়ারের জন্য এল নিনোর পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের ডাইপোলকেও দায়ী করা হয়। ইন্ডিয়ান ওশেন ডাইপোল (The Indian Ocean Dipole -IOD) বা আই ও ডি বৈশ্বিক জলবায়ুর অন্যতম ঘটনা।

এই আইওডি এর তিনটি পর্ব রয়েছে— ধ্বনাত্মক, ঋণাত্মক ও নিরপেক্ষ। গড়ে একেকটি পর্বের স্থায়ীত্বকাল তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে।

সিএসআইআরওর (The Commonwealth Scientific and Industrial Research Organisation-CSIRO) অন্যতম বিজ্ঞানী ও ক্লাইমেট চেইঞ্জ রিসার্চ সেন্টার এর জ্যেষ্ঠ সহযোগী গবেষক এগাস সানতোসো জানান, ঋণাত্মক আইওডি এর ফলে অধিক হারে বৃষ্টি হয়।

সাউদার্ন আন্যুলার মোড এর কারণে অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণে তারতম্য ঘটে, বিশেষ করে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়। একে আর্কটিক অসিলেশনও বলা হয়ে থাকে। এর সাথে যখন লা নিনা যোগ হয় তখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। উপরোক্ত সব প্রভাবকের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেইঞ্জকেও বিবেচনায় আনতে হবে বলে মতামত দেন ডক্টর পাওয়ার।


 

 


Share