নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে বাংলাদেশী যুবকদের কোভিডকালীন ফুড শেয়ারিং প্রজেক্ট প্রশংসিত

Branding Bangladesh food sharing

It’s an honour to Branding Bangladesh team handover the certificate of recognition by Hon. Wendy Lindsay MP for volunteering for Food sharing initiatives . Source: Noman Shamim

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সঙ্কটকালে সিডনিতে বাঙালিদের “ফুড শেয়ারিং প্রজেক্ট” শুধু প্রবাসী বাংলাদেশী নয়, অস্ট্রেলিয়ার মুলধারার রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মীদেরও নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ইস্ট হলিস এলাকার সরকারদলীয় এমপি উওয়েন্ডি লিন্ডসে বিষয়টি নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে তোলেন এবং এই প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম উচ্চারণ করে পার্লামেন্টে ধন্যবাদ প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু কমিউনিটির এই কাজের জন্য সম্মাননা সুপারিশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এসবিএস বাংলা কথা বলেছে এই কাজটির সাথে যুক্ত কয়েকজনের সাথে। সাক্ষাৎকারগুলো শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।


হাইলাইটস

  • ৫ এপ্রিল ২০২০ থেকে ২৪ মে ২০২০ পর্যন্ত টানা ৫০ দিন শিক্ষার্থীদেরকে খাবার প্রদান করা হয়।
  • সিডনির বাংলাভাষী অধ্যুষিত লাকেম্বার নার্গিস কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে, ১২,০০০ এর বেশি মিল প্রদান করা হয়।
  • নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে এর স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ইস্ট হলিস এলাকার সরকারদলীয় এমপি উওয়েন্ডি লিন্ডসে সংশ্লিষ্ট সবার নাম উল্লেখ করেন।

অস্ট্রেলিয়ায় কোভিডকালীন সংকটে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিভিন্নভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। কর্মহীন ও যাদের প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে নামে স্থানীয় যুবকদের একটি সংগঠন। এই প্রজেক্টে খাবার তৈরি করে এপ্রিলের শুরু থেকে টানা ৫০ দিন চাকুরীহারা ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি খাদ্য সরবরাহ করে। সিডনিতে পড়তে আসা উল্লেখযোগ্য সংখক ছাত্রছাত্রীরা এই সহায়তা গ্রহণ করেন।

এ ধরনের একটি প্রকল্প কেন গ্রহণ করলেন, এ প্রশ্নের জবাবে এই প্রজেক্টের অন্যতম উদ্যোক্তা আব্দুল্লা আল নোমান শামীম এসবিএস বাংলাকে বলেন,

“মূলত অস্ট্রেলিয়াতে এ সময়টিতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং ট্রেডিং কোম্পানিগুলো সিডনিতে বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বাংলাদেশে থেকে আসা ছাত্রদের প্রধানতম কাজের উৎসটাই হচ্ছে এই দুটো ক্ষেত্র। যেহেতু তারা আনস্কিলড। জব ক্রাইসিস শুরু হয় তখন থেকে। স্টুডেন্টদের যে সমস্যাটা হচ্ছিল, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তখন খারাপের দিকে যাচ্ছিল।”
দেশের বাইরে থেকে বাঙালি হিসেবে প্রবাসীদের জন্য কিছু করতে পারাটা একটা বিরাট বিষয়। অনেক গর্বের একটা বিষয়।
“দেশ থেকে টাকা আনা বা তাদের নিজেদের খরচ চালানোর জন্য যে ২০ ঘণ্টার একটা কাজ ছিল, সেটা তারা হারাতো। এক ধরনের ক্রাইসিস তৈরি হয়। তখন আমরা মূলত এই প্রজেক্টটি দাঁড়া করাই। আমরা ফ্রি খাওয়া দিচ্ছি না। We are sharing meal with those students. এই জন্য আমরা ফুড শেয়ারিং প্রজেক্ট নামকরণ করি।”

“মূলত শুরু হয় ৫ এপ্রিল (২০২০)। এটা শেষ হয় ২৪ মে। টানা ৫০ দিন এবং ১২,০০০ এর বেশি মিল আমরা তৈরি করি। প্রত্যেক দিন আমরা কুকড ফুড তৈরি করেছিলাম নার্গিস কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, লাকেম্বাতে।”

“আমরা মূলত আমাদের ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই এই কাজটা করেছিলাম। এটা খুব একটা চিন্তা করে যে করেছিলাম, তা না। তবে আমাদের মনে হয়েছিল যে, আমাদের কিছু করা দরকার এই সময়ে এবং সেই সাথে আমাদের সিডনির কমিউনিটি, যারা বাঙালি ছিলেন, সবাই আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। এবং সবাইকে মিলে কিন্তু এই কাজটাকে আমরা এই জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছি।”

ভবিষ্যতেও কমিউনিটির পাশে দাঁড়াবেন কিনা, এ কথা জানতে চাইলে আল নোমান শামীম বলেন,

“অবশ্যই আমরা কমিউনিটির ক্রাইসিসে আবারও দাঁড়াবো। যতবার প্রয়োজন হবে ততোবার দাঁড়াবো আমরা।”
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সঙ্কটকালে সিডনিতে বাঙালিদের “ফুড শেয়ারিং প্রজেক্ট” শুধু প্রবাসী বাংলাদেশী নয়, অস্ট্রেলিয়ার মুলধারার রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মীদেরও নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ইস্ট হলিস এলাকার সরকারদলীয় এমপি উওয়েন্ডি লিন্ডসে বিষয়টি নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে তোলেন এবং এই প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম উচ্চারণ করে পার্লামেন্টে ধন্যবাদ প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু কমিউনিটির এই কাজের জন্য সম্মাননা সুপারিশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

এই প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উল্লেখ করে আল নোমান শামীম বলেন,

“মূলত এই প্রজেক্টের যারা প্রথম দিক থেকেই ছিলেন, তারা হলেন: শারমিন সুলতানা তানহা, আলী আশরাফ শিপুল, হাবিবুর রহমান চমন, মহিউদ্দিন কাদের, শাহনেওয়াজ আলো, নাহিয়ান ডি আজমল, ব্যারিস্টার নির্মাল্য তালুকদার, মোহাম্মদ কবীর, সৈয়দ রহমান, মিরাজ হোসেন, আকাশ দে, গৌতম পাল, শাকিল মল্লিক, ড. সাইফুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, বকুল হোসেন বকুল, আব্দুস সামাদ, আরিফুর রহমান, অপু সারওয়ার, মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, ড. লাভলী রহমান, ড. আবুল হাসনাত মিল্টন এবং নার্গিস রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন।”

নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে এই উদ্যোগটির স্বীকৃতি লাভ সম্পর্কে আল নোমান শামীম বলেন,

“যে-কোনো কাজেরই স্বীকৃতি ও সম্মাননা উৎসাহ তৈরি করে।”
আসলে এই ধরনের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে রেস্পন্সিবিলিটিটা কমিউনিটির উপরে হয়তো আরও বেড়ে গেছে এবং চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে যাতে আরও ভালভাবে, যখনি প্রয়োজন হয় আরও কিছু যাতে করতে পারি।
ফুড শেয়ারিং প্রজেক্টের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন শাহনেওয়াজ আলো। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“স্বীকৃতিটা প্রশ্নাতীতভাবে আমাদেরকে অনেক অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা প্রথ যখন ফুড শেয়ারিং শুরু করেছিলাম, তখন আসলে ভাবি নি যে, এটা এতোটা সাড়া ফেলবে। তবে, আস্তে আস্তে এটা মানুষের মনে অনেক জায়গা করে নিয়েছে।”

“আসলে এই ধরনের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে রেস্পন্সিবিলিটিটা কমিউনিটির উপরে হয়তো আরও বেড়ে গেছে এবং চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে যাতে আরও ভালভাবে, যখনি প্রয়োজন হয় আরও কিছু যাতে করতে পারি।”

ফুড শেয়ারিং প্রজেক্টের সাথে শুরু থেকেই যুক্ত মহিউদ্দিন কাদের বলেন,

“আমরা যখনই কাজটি শুরু করি, তখন কিন্তু আমরা কোনোভাবেই এই বিষয়টিকে মাথায় আনি নি বা মাথায় কোনোভাবেই আসে নি যে, আমরা এত বড় একটি স্বীকৃতি পাব এবং সরকারের কাছ থেকে আমাদের এই কাজকে ভাল একটা সম্মান দেওয়া হবে। এটা অনেক সম্মানের।”

“দেশের বাইরে থেকে বাঙালি হিসেবে প্রবাসীদের জন্য কিছু করতে পারাটা একটা বিরাট বিষয়। অনেক গর্বের একটা বিষয়।”

ফুড শেয়ারিং প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত আলী আশরাফ হিমেল বলেন,

“এই ধরনের স্বীকৃতি অবশ্যই একটি অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। কারণ, সবসময় এ ধরনের সুযোগ আসে না।”

“তখন একটা অস্থির সময় ছিল। নিজের ফ্যামিলি কমিটমেন্ট স্যাকরিফাইস করে আমরা প্রতিদিন যেতাম।”

আল নোমান শামীম, শাহনেওয়াজ আলো, মহিউদ্দিন কাদের এবং আলী আশরাফ হিমেলের সাক্ষাৎকার শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share