আরও একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মিত হতে যাচ্ছে সিডনিতে

সিডনির বাংলাভাষী-অধ্যুষিত লাকেম্বায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মিত হতে যাচ্ছে। এটি স্থাপনের জন্য ভূমি দিচ্ছে স্থানীয় কেন্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল।

Model of the International Mother Language Monument in Lakemba Sydney

Model of the International Mother Language Monument in Lakemba Sydney. Source: Facebook

একুশে অ্যাকাডেমি অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে সিডনির অ্যাশফিল্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ তৈরি হয় ২০০৬ সালে। সিডনিতে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। সিডনির জনবহুল বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বায় দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় কাউন্সিলের সহায়তায় একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
Councillor Mohammad Nazmul Huda
Councillor Mohammad Nazmul Huda of Canterbury Bankstown City Council. Source: Supplied
কেন্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল লাকেম্বার পিল পার্কে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। এ সম্পর্কে এই সিটি কাউন্সিলের বাংলাভাষী কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, কেন্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি-কাউন্সিল শুরু থেকেই এই মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্টের ব্যাপারে সহযোগিতা করে আসছে।

এই স্মৃতিসৌধটি স্থাপনের জন্য ভূমি দিচ্ছে স্থানীয় কাউন্সিল।

এটি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি স্থান বিবেচনা করা হলেও সবকিছু বিচার করে লাকেম্বার পিল পার্ককে বেছে নেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে এই স্মৃতিসৌধটির অন্যতম উদ্যোক্তা কাউন্সিলর হুদা বলেন, চারটি স্থানের মধ্যে দুটি স্থান কাউন্সিলের মাস্টার প্লানের জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে। মাস্টার প্লান চূড়ান্ত হতে কয়েক বছর সময় লাগবে। তখন যদি এই স্মৃতিসৌধটি না রাখা যায়, সেটা করেই ঐ দুটি স্থান বাদ দেওয়া হয়। আর, তৃতীয় স্থানটি খুব একটা বড় নয়। সবকিছু বিবেচনা করে লাকেম্বার বাংলা টাউনের খুব কাছাকাছি পিল পার্ক বেছে নেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান যে, এই স্মৃতিসৌধটি কেন্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল আজীবন দেখভাল করবে।

স্মৃতিসৌধটির নকশা তৈরি করেছেন পার্থ প্রতীম বালা। মিস্টার হুদা জানান, কাউন্সিল নকশাটির পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে সংশোধন করবে।

প্রকল্পটির অর্থায়নে বাংলাভাষী কমিউনিটির আর্থিক অনুদানের প্রয়োজন হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিউনিটি থেকে যারা আর্থিক অনুদান দিতে চান তাদের সুবিধার্থে কাউন্সিল একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। মিস্টার হুদা বলেন, এই প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ রাখার জন্যই এই অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে।
Mohammed Shahe Zaman Titu
Councillor Mohammed Shahe Zaman Titu, Canterbury-Bankstown City Council. Source: Supplied
কেন্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের প্রস্তাব পাশ হয়। এ প্রসঙ্গে এই স্মৃতিসৌধটির উদ্যোক্তা কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু বলেন, কাউন্সিলের অনুমতি পাওয়াটা সহজ কাজ ছিল না। এক্ষেত্রে তিনি কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাজমুল হুদার প্রয়াসের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাভাষী কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু লিবারাল পার্টির সদস্য। আর কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাজমুল হুদা লেবার পার্টির সদস্য। কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু বলেন, আমরা দু’জনেই যদিও দুটি আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করি, তারপরও কমিউনিটির স্বার্থে আমরা দু’জন সবসময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।

একুশের মহিমায় উজ্জীবিত মাতৃভাষাকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাঙালিরা কাজ করে যাচ্ছেন।
Munir Hosain
Munir Hosain. Source: Supplied
এই স্মৃতিসৌধটির আরেকজন উদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাংলা হাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মুনির হোসেন বলেন,

“আমরা মনে করি যে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ, এটা আমাদের গর্ব। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি, আমাদেরই দায়িত্ব সারা বিশ্বের কাছে এটা তুলে ধরা।”

এই স্মৃতিসৌধটির উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম সিডনির প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধেরও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। এটি বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ। ২০০৬ সালে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে অ্যাকাডেমী অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে এটি স্থাপিত হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নোমান শামীম সিডনি থেকে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় বাংলা পত্রিকা মাসিক মুক্তমঞ্চের সম্পাদক। তিনি বলেন, “বাঙালি জাতি-সত্তার মূলধারার সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের শহীদ মিনারের কনসেপ্ট সারা অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়ুক এবং বহুজাতি-সত্তার অস্ট্রেলিয়ার নিজস্বতাকে প্রতিনিধিত্ব করুক আমাদের ভাষার সংগ্রামের চেতনাবোধ, এটাই আমাদের কামনা।”
Noman Shamim
Noman Shamim Source: Facebook
এই স্মৃতিসৌধটির আরেক উদ্যোক্তা সমাজকর্মী লিংকন শফিকুল্লাহ বলেন, শহীদ মিনার শুধু ঢাকাতেই নয়, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় রয়েছে। তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ার যে-সব সাবার্বে বাংলাভাষীরা বসবাস করেন, সম্ভব হলে সে-সব সাবার্বেও শহীদ মিনার গড়ে তোলার চেষ্টা করা দরকার।

১৩ অক্টোবর সিডনির একটি রেস্টুরেন্টে তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি ফান্ড রেইজিং ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
Lincoln Shafiqullah CPA
Lincoln Shafiqullah CPA. Source: Supplied
Follow SBS Bangla on .

Share
Published 10 October 2019 3:19pm
Updated 11 October 2019 10:46am
By Abu Arefin

Share this with family and friends