অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি গ্রহণকারী অভিবাসীরা বেশি সুখী

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি বরণ করে নিয়েছেন তারা অন্য অভিবাসীদের চেয়ে বেশি সুখী।

AAP

Minister for Multiculturalism Ray Williams (centre) is seen with participants ahead of the 2019 Parramasala Festival Parade in Sydney, Thursday, March 14, 2019. Source: AAP

গবেষণায় দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা সময় অবস্থান করলেই দক্ষ-অভিবাসীরা ভাল অবস্থায় থাকবেন, বিষয়টি সে রকম নয়। ভাল থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়াটা জরুরী।

বহু-সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়ায় আগত অভিবাসীরা চাইলে তাদের ছেড়ে আসা দেশের সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারেন। কিন্তু, সম্প্রতি এক গবেষণায় ৩০০ অভিবাসীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, যারা অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি গ্রহণ করেছেন তারা ভালো রয়েছেন তাদের তুলনায় যারা এ দেশের সংস্কৃতি গ্রহণ করে নি।

‘পার্সোনাল ওয়েল-বিয়িং’ বা ভাল থাকার বিষয়টি নির্ভর করে কারও জীবনযাত্রার মানের ওপর, যা দুটি পর্যায়ে পরিমাপ করা যায়।

প্রথমত, তারা তাদের জীবন নিয়ে সামগ্রিকভাবে কতোটা সন্তুষ্ট? দ্বিতীয়ত, তারা সুনির্দিষ্ট ও আলাদাভাবে তাদের বিভিন্ন অর্জন, সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে কতোটুকু সন্তুষ্ট?

পাশ্চাত্যের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে যেসব দক্ষ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেছেন তাদের মধ্যে যারা তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছেন বলেছেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে,

  • তারা ছেড়ে আসা দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত
  • তারা ইংরেজি ভাষায় অনেক দক্ষ
  • তাদের অস্ট্রেলিয়ান পরিচিতি রয়েছে
এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অভিবাসীরা যদি অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি গ্রহণ না করেন, সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করলেও ভাল থাকার জন্য তা যথেষ্ট হয় না।

সামাজিক সম্পৃক্ততা

অস্ট্রেলিয়ান ইউনিটি পার্সনাল ওয়েল-বিয়িং ইনডেক্স (পি-ডব্লিউ-আই) এর সাহায্যে ভাল থাকার বিষয়টি নির্ণয় করা হয়েছে। এতে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির বিষয়টি ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত একটি পয়েন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ জনগণের সঙ্গে দক্ষ অভিবাসীদের ভাল থাকার বিষয়টি তুলনা করা হয়েছে এই গবেষণায়।

অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ জনগণের গড় পি-ডব্লিউ-আই ১০০ এর মধ্যে ৭৪.২ থেকে ৭৬.৮ পয়েন্ট পর্যন্ত। এক্ষেত্রে, দক্ষ অভিবাসীদের যে নমুনা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে, তাদের পি-ডব্লিউ-আই এর গড় ৭৭.২৭ যা সাধারণ জনগণের গড়ের চেয়ে বেশি।

দক্ষ অভিবাসীদের উচ্চ শিক্ষা, দক্ষতা এবং বেতনের জন্য হয়তো সামগ্রিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান জনগণের চেয়ে তাদের ওয়েল-বিয়িং বা ভাল থাকার হার বেশি হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

কমিউনিটি কানেক্টেডনেস বা সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ানদের তুলনায় দক্ষ অভিবাসীরা সবচেয়ে কম স্কোর করেছে। কমিউনিটির কতোজন লোকের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্ক কতোটা শক্তিশালী তার উপর ভিত্তি করে এক্ষেত্রে স্কোর করা হয়েছে।

স্কোর এক্ষেত্রে কম হওয়ার কারণ হয়তো:

  • দক্ষ অভিবাসীরা তাদের দূরবর্তী আত্মীয়দের সঙ্গে এবং একই নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলে।
  • অস্ট্রেলিয়ার সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ-সুবিধা হয়তো খুব বেশি নয়। কিংবা
  • তারা হয়তো বৃহৎ সমাজ থেকে নিজেদেরকে বিযুক্ত ও বাদ-পড়া মনে করেন।

Image

দ্বি-সংস্কৃতি

অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি বরণ করার পরিবর্তে, কোনো কোনো দক্ষ অভিবাসী তাদের নিজেদের সংস্কৃতি বজায় রাখেন এবং একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতিরও কিছু কিছু দিক গ্রহণ করেন ও চর্চা করেন। তাদের জন্য, অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি ও ছেড়ে আসা দেশের সংস্কৃতি- এই দুটির মধ্যে যখন যেটি দরকার তার চর্চা করার বিষয়টি অধিকতর বাস্তব সম্মত।

যেমন, কোনো ভারতীয় পরিবার যদি মেলবোর্নে বাস করতে যায় তখন তারা তাদের খাদ্যাভ্যাস, ভাষা এবং বন্ধু-সমাজের মাধ্যমে তাদের ভারতীয় সংস্কৃতি বজায় রাখবে। এর পাশাপাশি তারা হয়তো অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগ দেখতে যাবে এবং কোনো দলকে সমর্থন করবে।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করার সময়ে অভিবাসীরা তাদের ছেড়ে আসা দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও মূল্যবোধ পরিত্যাগ করে।

পাশ্চাত্যের কোনো দেশ থেকে আসেন নি এ রকম প্রথম প্রজন্মের কোনো অভিবাসীর পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি গ্রহণ করাটা অনেক কঠিন। গবেষণায় দেখা গেছে এ রকম লোকদের পক্ষে পশ্চিমা সংস্কৃতি গ্রহণ করাটা সহজ হয় না।

এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে, যেমন, ছেড়ে আসা দেশের সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নতুন দেশে যে সমাজে তারা বাস করেন সে সমাজে বহু-সংস্কৃতি বজায় রাখার সুযোগ থাকা।

অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি গ্রহণে ব্যর্থ হলে সামাজিক-ব্যবধান বাড়বে

বেশিরভাগ অভিবাসী কম বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন। নতুন দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, জ্ঞান, প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ নিয়ে আসেন তারা। এর ফলে তারা অস্ট্রেলিয়ার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ভাল অবদান রাখতে পারেন।

কিন্তু, যদি তারা তাদের সংস্কৃতি নয় এমন পরিবেশে বার্ধক্যে পৌঁছান, তখন তারা একাকিত্বে ভোগাসহ নানাবিধ সমস্যায় নিপতিত হন। তাদের জন্য তাই অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি গ্রহণ করাটা জরুরি।

২০১৫ সালে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাংলো অস্ট্রেলিয়ানদের তুলনায় ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ সমাজ থেকে আসা বৃদ্ধ লোকদের ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

গবেষণায় ব্যবহৃত দক্ষ অভিবাসীদের নমুনা, যাদের গড় বয়স ৩৮ বছর, তারা ‘কমিউনিটি কানেক্টেডনেস’-এ খুব কম স্কোর করেছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক-বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।

নতুন একটি সংস্কৃতিতে অভিবাসীরা যেন সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত জীবন অতিবাহিত করতে পারে সেজন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি সার্ভিসেস এবং অস্ট্রেলিয়ান মাল্টিকালচারাল ফাউন্ডেশন-এর মতো সংস্থাগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই।

এ সম্পর্কে ইংরেজিতে আরও পড়ুন এই 

Follow SBS Bangla on .




Share
Published 25 July 2019 3:13pm
Updated 25 July 2019 3:17pm
By Asanka Gunasekara
Presented by Sikder Taher Ahmad
Source: The Conversation

Share this with family and friends