করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় মক্কা সফরে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানরা বিপাকে পড়েছেন

মক্কায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে সেখানে ভ্রমণের জন্য টিকিটসহ নানা ব্যবস্থা করে ফেলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সে রকম মুসলমানরা এবং ট্রাভেল এজেন্টরা এতে বিপাকে পড়ে গেছে।

Muslim pilgrims wear masks at the Grand Mosque in Saudi Arabia's holy city of Mecca.

Muslim pilgrims wear masks at the Grand Mosque in Saudi Arabia's holy city of Mecca. Source: AFP

সামনের দিনগুলোতে সৌদি আরবে ভ্রমণে ইচ্ছুক অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেখানে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সৌদি আরব।

সৌদি আরবে মুসলমানদের দু’টি পবিত্র ধর্মীয় স্থান রয়েছে। গত মাসে পবিত্র মক্কা এবং মদীনা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে সেই স্থান দু’টি পরিদর্শনে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়ার শত শত দর্শনার্থী এখন কী করবেন তা নিয়ে ভাবছেন।

ট্রাভেল প্যাকেজের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তারা বুকিং দিয়েছেন এবং অর্থ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতের দিনগুলোতে কোনো ওমরাহকারী (তীর্থযাত্রীদের) গ্রহণ করবে না সৌদি সরকার। তাদের এই আকস্মিক নিষেধাজ্ঞায় হতাশা নেমে এসেছে বিদেশী মুসলমানদের মনে।
gettyimages-1203647718.jpg
জীবনে প্রথমবারের মক্কা সফরের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মোহাম্মদ স্কাফ। কিন্তু, তার সেই পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে। ২০ বছর বয়সী এই মুসলমান ও তার পরিবার এখন ভাবছে ইতোমধ্যে খরচ হওয়া ৩০,০০০ ডলারের মধ্যে কতো ডলার তারা ফেরত পাবেন তা নিয়ে।

মিস্টার স্কাফ এসবিএস নিউজকে বলেন,

“আমি আশা করছিলাম যে, অবশেষে কাবা শরীফ দেখবো, যেখানে মুখ করে মুসলমানরা নামাজ আদায় করে।”

“পরিবারের সাত সদস্যের সঙ্গে আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, আমরা এই সুযোগটি হারাতে যাচ্ছি।”
“আমি কিছুটা সাহসী। তবে দিন শেষে এটা যা, তা-ই। করোনাভাইরাস আসলে সত্যিকারের চিন্তার বিষয়। আমি মনে করছি না যাওয়াটা ভাল সিদ্ধান্ত। এটা অনেক বড় বিনিয়োগ ছিল আর আমরা বিশ্বাস রাখছি যে, এই অর্থের সামান্য কিছু অংশ হলেও আমরা ফেরত পাব।”

ইউনাইটেড মুসলিমস অফ অস্ট্রেলিয়া কমিউনিটির নেতা ইব্রাহীম দাদৌন ৩৫ জন মুসলমান নিয়ে মক্কায় ওমরাহ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হওয়ার পর এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“এটা খুব কঠিন ছিল, কারণ, সবাই ওমরাহ করতে যাওয়ার জন্য উৎসুক ছিল।”

“আমরা সর্বোত্তম উপায়ে এ সম্পর্কে তাদেরকে বলার চেষ্টা করেছি, যেন তারা বিষয়টি অনুধাবন করে এবং বুঝতে পারে যে, এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।”

“এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারাণভাবে তারা মেনে নিয়েছেন।”
এই ভ্রমণ বাতিল হওয়ার পর মিস্টার দাদৌন প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন যে, সৌদি কর্তৃপক্ষ, এয়ারলাইন্স এবং ট্রাভেল এজেন্টরা কী পরিমাণ অর্থ ফেরত দেবে।

তিনি বলেন,

“আমরা তাদেরকে বলেছি যে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কিংবা ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে এর কোনো জবাব নেই। আরও তথ্যের জন্য আমরা এখনও অপেক্ষা করছি। তবে আমরা প্রকাশ করেছি যে, আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।”

“এই মুহূর্তে তারা সবাই ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং অপেক্ষা করছেন। কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাভেল এজেন্টরা আমাদেরকে আরও কিছু প্রশ্নের জবাবে কবে দেবেন সেজন্য আমরাও অপেক্ষা করছি।”

সিডনির পশ্চিমে লাকেম্বা ট্রাভেল সেন্টারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ওমর ইয়াসিন ১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০০,০০০ এরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানের মক্কা ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি আর্থিক ধাক্কা গ্রহণের জন্য তৈরি।
Lakemba Travel Centre managing director, Omar Yassine.
Lakemba Travel Centre managing director, Omar Yassine. Source: SBS News
“আমরা বিস্মিত”, বলেন মিস্টার ইয়াসিন, “এটি অনেক বড় ধাক্কা ছিল।  আমরা কর্মচারীদেরকে অর্থ প্রদান করেছি, হোটেল ও এয়ারলাইন্স বুক করেছি, সবকিছুই সম্পন্ন করা হয়েছে। দিনের শেষে আমাদেরকে যাত্রীদেরকে সন্তুষ্ট করতে হবে এবং তাদেরকে তাদের সমস্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে। কারণ, এটা তাদের অধিকার।”

ধারণা করা হচ্ছে যে, নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে মিস্টার ইয়াসিনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০,০০০ ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হবে।

এখন পর্যন্ত লাকেম্বা ট্রাভেলের সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরও কয়েক মাস যদি মক্কা ও মদীনায় ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ থাকে তাহলে মিস্টার ইয়াসিনের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি কমপক্ষে এক মিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
Lakemba Travel Centre managing director, Omar Yassine.
Lakemba Travel Centre managing director, Omar Yassine. Source: SBS News
তিনি বলেন,

“(হজ্ব নিয়ে) ভবিষ্যতে কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের এয়ারলাইন্স বুকিং রয়েছে এবং আমরা আশা করছি যে, তারা এজেন্সিকে অর্থ ফেরত দিবে এবং আমরা যাত্রীদেরকে সেই অর্থ ফেরত দিব। কেউ জানে না। এটা নির্ভর করে করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করার উপরে।”

লাভজনক উপার্জন ছাড়া হজ্ব ও উমরাহর জন্য তার এই ভ্রমণ-ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা এ সম্পর্কে মিস্টার ইয়াসিন সতর্ক মন্তব্য করেন।

“আল্লাহ্ জানে। আমরা টিকে থাকবো কি থাকবো না, এটা নির্ভর করে এই রোগ থামবে কি থামবে না তার উপর।”

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 11 March 2020 3:12pm
By Essam Al-Ghalib
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends