ক্রিসমাস আইল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়ানরা করোনাভাইরাস মুক্ত

চীন থেকে ফেরত এনে ক্রিসমাস আইল্যান্ডে কোয়ারান্টাইন করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ানদেরকে। করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য আর কোনো পরীক্ষণ বাকি না থাকলে তাদের একটি দলকে আগামী সোমবার অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসা হবে। আর, দ্বিতীয় একটি দল আসবে বুধবার।

Hundreds of evaucess remain inside the detention centre.

Hundreds of evaucess remain inside the detention centre. Source: AAP

ক্রিসমাস আইল্যান্ডে কোয়ারান্টাইন করা অস্ট্রেলিয়ানদের প্রথম দলটি আগামী সপ্তাহে ডিটেনশন সেন্টার ছেড়ে যাবে। সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের জীবানুর উপস্থিতি দেখা যায় নি।

অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স টিম এসবিএস নিউজকে গত বুধবার নিশ্চিত করেন যে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি।

ওয়েস্টার্ন সিডনির ওয়েস্টমিড হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়। পরীক্ষার ফলাফল লাভের আগ পর্যন্ত সেই ব্যক্তিকে ক্রিসমাস আইল্যান্ড ডিটেনশন সেন্টারে অন্যান্যদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত বুধবার জানতে পারেন যে, পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক এসেছে। অর্থাৎ, তার মাঝে করোনাভাইরাসের জীবানুর উপস্থিতি পাওয়া যায় নি।

এরপর সেই ব্যক্তিকে আর আলাদা করে রাখা হয় নি। তিনি বাকি সবার সঙ্গেই সেখানে রয়েছেন।
গত সপ্তাহে এক তরুণীর মাঝে ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তবে তার পরীক্ষণের ফলাফলও নেতিবাচক এসেছে।

গত সোমবার একটি নতুন ডায়াগনিস্টিক মেশিন পাঠানো হয় ক্রিসমাস আইল্যান্ডে। এসবিএস নিউজ এটা নিশ্চিত করেছে যে, সেটাতে গত মঙ্গলবার রাতে তৃতীয় আরেক ব্যক্তির নমুনা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায় নি।

তৃতীয় ঐ পরীক্ষণের ফলাফল যাচাই করে দেখা হবে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে আরেকটি পরীক্ষণের মাধ্যমে। নিশ্চিতভাবে এর ফলাফল জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা।

করোনাভাইরাস প্রাদূর্ভাবের কেন্দ্রস্থল, চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৫৪০ জন অস্ট্রেলিয়ানকে বিমানযোগে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদেরকে ক্রিসমাস আইল্যান্ডে এবং ডারউইনের নিকটস্থ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পে তাদেরকে কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে।

ক্রিসমাস আইল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রথম দলটি আগামী সোমবার ঘরে ফিরবে এবং দ্বিতীয় দল ফেরত আসবে বুধবার।
Evacuees are seen in the Christmas Island Australian Immigration Detention Centre.
Evacuees are seen in the Christmas Island Australian Immigration Detention Centre. Source: AAP
হেলথ মিনিস্টার গ্রেগ হান্ট সংসদে বলেন,

“অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের একটি ব্যবস্থা কার্যকর আছে যার মধ্যে এই পর্যায়ে, আমি বলছি এই পর্যায়ে, সংক্রমণ ধারণ করা হচ্ছে।”

ফরেইন মিনিস্টার ম্যারিস পেইন বলেন, চীন থেকে আর একটি ফ্লাইটের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না, বিশেষত কোয়ান্টাস এখন সে দেশে যাওয়া আসার ফ্লাইট বন্ধ করেছে।

তিনি বলেন, ইয়াকোহমায় নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ শিপে ভাইরাসটির ৪০টি নতুন কেস ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পক্ষ থেকে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে COVID-19.

গত বুধবার ক্যানবেরায় রিপোর্টারদের উদ্দেশে তিনি বলেন,

“নতুন কেসগুলোর মধ্যে কোনো অস্ট্রেলিয়ান আছেন কিনা, টোকিওতে আমাদের দূতাবাসের কাছে তা জানতে চাচ্ছে জাপান কর্তৃপক্ষ।”
গত বুধবার গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, নতুন আক্রান্ত হওয়া চার ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ান।

বিদেশী চীনা শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। তবে, মিস্টার হান্ট বলেন, স্বাস্থ্যের বিষয়টিই প্রথমে আসবে।

প্রতিবেদকদেরকে তিনি বলেন,

“আমরা অনেক সচেতন, অর্থনৈতিক ফলাফলের ব্যাপারে আমরা গভীরভাবে সচেতন।”

“কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার ভেতরে সংক্রামক ব্যাধির প্রভাব অর্থনৈতিক, অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে মানুষের উপরে প্রভাব অসাধারণ।”
Health Minister Greg Hunt
Health Minister Greg Hunt Source: AAP
অস্ট্রেলিয়ায় রিপোর্ট হওয়া ১৫টি কেসের মধ্যে পাঁচ জন আরোগ্য লাভ করেছেন এবং বাকি ১০ জনের অবস্থা স্থিতিশীল।

এর আগে, অস্ট্রেলিয়ার চিফ মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডান মার্ফি বলেন, সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ হলে যা হতে পারে তা হলো, যদি ভাইরাসের আক্রমণ খুব তীব্র হয় তবে অস্ট্রেলিয়ায় মহামারী দেখা দিবে। তিনি বলেন,

“সেক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই আমাদের হেলথ সিস্টেমে এবং অর্থনীতিতে অত্যন্ত ভয়ানক চাপ পড়বে।”
Passengers from a China Southern Airlines flight touch down in Australia last month.
Source: Getty
“এই মুহূর্তে আমরা তা আশা করছি না তবে আমরা সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য নিঃসন্দেহে প্রস্তুত।”

প্রফেসর মার্ফির ডেপুটি, পল কেলি প্রতিবেদকদেরকে বলেন, ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনের সময়-সীমা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন,

“এই ভাইরাসের বহু বিষয় সম্পর্কে আমরা এখনও জানি না। এগুলোর একটি হলো ইনকিউবেশন পিরিয়ড।”

(রোগসঞ্চার থেকে প্রথম রোগলক্ষণ দেখা দেওয়া পর্যন্ত কাল বা সুপ্তাবস্থাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে।)

“সাবধানতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা ১৪ দিন সময় ব্যবহার করছি। এই সময়কাল এর চেয়ে কম।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসাস গত মঙ্গলবার বলেন, এই ভাইরাসটি “বাকি দুনিয়ার জন্য খুবই ভয়ানক হুমকি” হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট টনি বার্টন বলেন, এই বার্তা সময়োপযোগী।

ড. বার্টন বলেন, অস্ট্রেলিয়া যখন “খুবই প্রবলভাবে” বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন অন্যান্য দেশ কিন্তু “বর্তমান গুরুতর অবস্থা যেন বিপর্যয়ের রূপ ধারণ না করে” সেজন্য মনে-প্রাণে কাজ করছে না।

তিনি বিশেষ কোনো দেশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করতে অস্বীকার করেন।

যাহোক, প্রফেসর মার্ফি বলেন, তিনি অনুভব করেন, এটি “অত্যন্ত বিস্ময়কর” যে প্রতিবেশী জনসংখ্যা-বহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত কোনো কেসের কথা জানা যায় নি। তিনি বলেন,

“উদ্বেগের জন্য কোনো কারণ থাকতে হবে। সেখানে হয়তো সনাক্ত করা হয় নি এ রকম কেস রয়েছে।”
সিনেটর পেইন বলেন, ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনে তাদেরকে সাহায্য করা হবে।

সিনেটর পেইন মনে করেন, এই ভাইরাসটির বিস্তৃতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আগামী এপ্রিল নাগাদ এটি শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু, প্রফেসর মার্ফি বলেন, এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য এটি সঠিক সময় নয়।

মিস্টার হান্ট বলেন, বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসটিতে সুনিশ্চিতভাবে ৪৪,৭৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১১১২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

Additional reporting: AAP

Share
Published 13 February 2020 4:49pm
Updated 14 February 2020 9:08am
By Aaron Fernandes
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends