অস্ট্রেলিয়ায় ইস্টার যেভাবে ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে

Australia Explained - Easter

Social and cultural Easter traditions Australians follow, beyond religion Credit: Fly View Productions/Getty Images

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

মূলত খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে ইস্টারকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ধর্ম নির্বিশেষে অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ মানুষের জন্য ইস্টারের সময়টি সপ্তাহান্তে দীর্ঘ ছুটি, ঘর থেকে বের হয়ে নানারকম ক্রিয়াকলাপ এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার সময়। তাছাড়া এই সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিও ছুটি থাকে বলে তখন শিশুরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উৎসবগুলি উদযাপন করার সুযোগ পায়।


গুরুত্বপূর্ণ দিক:
  • অস্ট্রেলিয়ায় শরৎকালে ইস্টার পালন করা হয়, যা প্রায়শই স্কুল ছুটির সাথে মিলে যায়।
  • ধর্মীয় তাৎপর্যের বাইরে ইস্টারের সময়কে পারিবারিক মিলনমেলা, একে অপরের সাথে বন্ধন দৃঢ করার সুযোগ, ভ্রমণ, উৎসব এবং ঘরের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপ করার সময় হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
  • ইস্টার বিলবি অস্ট্রেলিয়ার একটি নিজস্ব ও অনন্য ঐতিহ্য, যা চকলেট ডিমের বাহক হিসাবে ইস্টার বানি বা খরগোশকে প্রতিস্থাপিত করে।
অস্ট্রেলীয়রা ইস্টার বলতে কেবল ইস্টার সানডে-কেই বোঝায় এরকমটা নয়, বরং ইস্টারের সময়ের কয়েকদিনব্যাপী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানদের দ্বারা উদযাপিত অনুষ্ঠানকে বোঝায়।

অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা, এমনকি যারা কোনো ধর্ম পালন করে না সেসব মানুষও ইস্টারের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। কারণ এই সময়ে গুড ফ্রাইডে, ইস্টার সানডে এবং ইস্টার মানডে-তে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

এ ছাড়াও ছাড়া বেশিরভাগ স্টেট ও টেরিটরিতে ইস্টার স্যাটারডে-ও একটি সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
Australia Explained - Easter
Children can make their own basket as an arts & crafts activity to use for their Easter egg hunt. Credit: Fly View Productions/Getty Images
লিসা বেকার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নে আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন বিষয়ে গবেষণা করছেন।

তিনি বলেন, ধর্মীয় তাৎপর্য ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় ইস্টারকে পরিবারের সদস্যদের সাথে একত্র হওয়ার সময় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবহাওয়া ভালো থাকে বলে ছোট শিশুরা এসময় খেলাধূলা এবং ঘরে-বাইরে নানা কার্যকলাপে অংশ নিতে পারে।

ইস্টার সানডে-তে বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে কয়েকটি পরিবার বা সম্প্রদায় মিলে ইস্টার এগ খোঁজার খেলা আয়োজন করে থাকে। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীরা লুকিয়ে রাখা ডিম আকৃতির ছোট-বড় চকোলেট, ক্যান্ডি এবং রঙ-বেরঙের আসল ও কৃত্রিম ডিম খুঁজে বের করে।

ইস্টার বানি বা খরগোশ এসে এই ডিম লুকিয়ে রেখেছে, শিশুদের এমন গল্প বলে সেগুলো খুঁজে বের করতে উৎসাহ দেয়া হয়।

তবে মিজ বেকার বলেন,
ইদানিং অস্ট্রেলিয়ার অনেক মানুষই খানিকটা বদলে নিয়ে এই ঐতিহ্য পালন করে থাকে। তারা খরগোশের বদলে ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ার নেটিভ বা স্থানীয় একটি প্রাণীকে, যার নাম বিলবি।

একটি বহুসাংস্কৃতিক দেশ হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার উদযাপনও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ।

মিজ বেকার বলেন, উদযাপন যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বিশেষত ক্যাথলিক এবং অর্থোডক্স উভয় সম্প্রদায়ের অনুশীলনের পাশাপাশি কোনো ধর্মের সাথেই সম্পর্কিত নয় এমন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও অন্তর্ভুক্ত করতে সচেষ্ট থাকে।
Australia Explained - Easter -  mother and child with Easter bonnet
Making an Easter hat and participating in an Easter hat parade is a classic cultural ritual, that many children and schools opt to participate in, says Ms Baker. Credit: OMG/Getty Images
ড্যানিয়েল কোরি লেবানিজ বংশোদ্ভূত একজন সিডনিসাইডার যিনি বেড়ে ওঠার সময় ক্যাথলিক এবং অর্থোডক্স ইস্টার উভয়ই উদযাপন করেছেন।

এই দুটি প্রধান খ্রিস্টান সম্প্রদায় পৃথক দুটি তারিখে ইস্টার উদযাপন করে থাকে, কারণ তারা আলাদা দুটি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।
Australia Explained - Easter
Different cultural group celebrate Orthodox Easter in Australia, including followers of the Greek Orthodox, Russian Orthodox and Macedonian Orthodox faith. Credit: LOUISE BEAUMONT/Getty Images
মিজ কোরি বলেন, অনেকের জন্যেই ইস্টার হচ্ছে সবাই মিলে একত্র হওয়ার সময়। মিজ কোরির বেড়ে ওঠার সময় তার পরিবার ঠিক এই কাজটিই করতো, এবং তারপরে সবাই মিলে একসাথে উৎসবের খাবার ভাগ করে খেতো।

এদেশীয় অর্থোডক্স ইস্টার সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রচলিত একটি চর্চা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন পেঁয়াজপাতা, ইত্যাদি ব্যবহার করে ইস্টারের ডিমগুলিকে সাজানো। তারপরে পরিবারের সদস্যরা এই ডিমগুলি দিয়ে ডিমের লড়াইয়ের আয়োজন করে থাকে।

মিজ কোরি বলেন,
ইস্টারের সময় অনেক অস্ট্রেলিয়ানই তাদের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে যান, ঘরের বাইরে সময় কাটান এবং বিভিন্ন উৎসবেও যোগ দেন।
Australia Explained - Easter - Princess Anne Visits Sydney
Held over a two-week period around Easter, the Sydney Royal Easter Show is Australia’s largest in size annual event, attracting over 800,000 people. Credit: Mark Metcalfe/Getty Images
সিডনির অনেক বাসিন্দার মতো মিজ কোরির পারিবারিক অনেক স্মৃতির একটি হচ্ছে ইস্টার শো-তে অংশ নেওয়া। সিডনি রয়্যাল ইস্টার শো-কেই সংক্ষেপে ইস্টার শো নামে ডাকা হয়। এই উৎসবে কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায়ের অবদানকে উদযাপন করা হয়।

ইস্টারের সময়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আয়োজিত এই উৎসবটি অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বার্ষিক কর্মসূচী হিসাবে পরিচিত, যাতে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

জেনারেল ম্যানেজার অব এগ্রিকালচার এবং সিডনি রয়্যাল ইস্টার শো-এর মহাব্যবস্থাপক মারে উইলটন বলেন, নাম ইস্টার শো হলেও এর সাথে ধর্মীয় উদযাপনের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্টেটসহ নিউ সাউথ ওয়েলসের মানুষেরা এই ইস্টার শো-তে অংশ নিয়ে থাকে। এই শো-তে বিভিন্ন কার্নিভাল রাইড, খেলাধূলার আয়োজন, খামারের প্রাণীদের সাথে সময় কাটানো এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

মারে উইল্টন বলেন, সিডনি রয়্যাল ইস্টার শো বহুসংস্কৃতিবাদকে স্বাগত জানায় আর এ কারণেই আয়োজকরা এর কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সেদিনের আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব দিবসকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের মিজ বেকার বলেন, সার্বিকভাবে ইস্টার হচ্ছে অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও আনন্দ উদযাপনের একটা সুযোগ যা আমাদের সামাজিক বোধ ও মানসিক সুস্থতাকেও অনুপ্রাণিত করে।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার লিঙ্কে ক্লিক করুন।

Share