অস্ট্রেলিয়ার অনন্য জলবায়ু ও মূল্যবান জল-সম্পদের উৎস সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

Lake Eildon was built in the 1950's to provide irriga

Lake Eildon was built in the 1950's to provide irrigation water for the Goulburn Valley Credit: Construction Photography/Avalon/Getty Images

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

সব কয়টি বাসযোগ্য মহাদেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে শুষ্ক মহাদেশ। এর একেকটি অংশের জলবায়ু ভিন্ন এবং একেক বছরে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার ধরণেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে।


ক্রান্তীয় আবহাওয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে নাতিশীতোষ্ণ দক্ষিণের এলাকা, সেইসাথে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং খরা, এরকম নানা ধরণের আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু এর বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখে, যার মধ্যে অনেকগুলিই পানির ঘাটতির কারণে হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, বুশফায়ার বা দাবানল এবং খরা এই পরিবেশকে আরও বেশি হুমকির মুখে ফেলে দেয় এবং এ-কারণেই তাদের সংরক্ষণের জন্যে আরও বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন।

অস্ট্রেলিয়া একটি বৃহৎ দেশ, এবং এ দেশের যে কোনো অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এর ভূ-প্রাকৃতিক গঠন, জলবায়ু পরিস্থিতি এবং আবহাওয়ায় অনেক বৈচিত্র রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর একদম গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ান কবি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা মাই কান্ট্রি, যা এই বিস্তৃত ধূসর ভূমির সৌন্দর্য এবং নির্জনতাকে ধারণ করেছিল।

তিনি লিখেছিলেন,
রোদে-পোড়া এই দেশকেই আমি ভালোবাসি, বিস্তৃত সমভূমির এই দেশ, উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি, আর খরা ও বন্যার এই দেশ।
অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে তাঁর এই বর্ণনা আজও সত্য।

ক্যাথরিন গ্যান্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন সিনিয়র জলবায়ু বিশেষজ্ঞ।

তিনি অস্ট্রেলিয়ার চরম আবহাওয়া সম্পর্কিত কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, “অস্ট্রেলিয়া একই সাথে খরা ও বন্যার দেশ। এখানকার অনেক অঞ্চলে বছরের পর বছর খরা দেখা যায়, আবার কিছু অঞ্চলে মাসের পর মাস বৃষ্টিপাত হয়।“
The stark landscape of the Monaro Tablelands which is one of 19 ecosystems collapsing in Australia - Image Greening Australia.JPG
The stark landscape of the Monaro Tablelands which is one of 19 ecosystems collapsing in Australia - Image Greening Australia. Credit: Annette Ruzicka
এ দেশের এরকম চরম আবহাওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে বেশ কয়েকটি, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে
অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ।
যদিও প্রায় , কিন্তু এটি বিশ্বের মোট ভূমির মাত্র পাঁচ শতাংশ।
Australian climate zones based on temperature and humidity - credit BOM.png
Australian climate zones based on temperature and humidity - credit BOM.png
এই জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, গাছপালার বৈচিত্র এবং মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ধরন অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ও ঋতু-পরিবর্তন দেশের বিভিন্ন অংশে আলাদা হয়ে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী এবং টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার মানুষেরা এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখে এবং অস্ট্রেলিয়ায় তাদের ভৌগলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করে নিয়েছে, যেগুলি মূলত আবহাওয়া এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।
Lake Keepit in New South Wales - Image Wallula-Pixabay.jpg
Lake Keepit in New South Wales - Image Wallula-Pixabay
মিজ গ্যান্টার বলেন, আবহাওয়া, স্থানভেদে তাপমাত্রার তারতম্য এবং সর্বোপরি, বৃষ্টিপাতের হার স্থানীয় জলবায়ুর পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলে।

জলের সহজলভ্যতা এবং খরার প্রকোপ, এই দুইই কৃষি, সম্প্রদায় এবং অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শুষ্কতম জনবহুল মহাদেশ, এবং এখানকার বেশিরভাগ পরিবেশেই জলের পরিমাণ সীমিত, তবে এই পরিবেশেই এখানকার জীবজগত নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
Seasonal rainfall zones of Australia - credit BOM.png
Seasonal rainfall zones of Australia - credit BOM.
ড. ব্লেয়ার পারসনস ডিরেক্টর অব ইমপ্যাক্ট। এই সংস্থাটি স্বাস্থ্যকর এবং উৎপাদনশীল ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে, যেখানে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়ই সমৃদ্ধ হয়।

ড. পারসনস বলেন, কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তিত প্রাচীন ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বর্তমানে আরও অনেক ধরণের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি এবং পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর হিসেবে পরিচিত।
জলের গুণগত মান অনেক কমে যাওয়াই জন্য বিশাল হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন পলিমাটি ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমি থেকে এসে প্রবালপ্রাচীরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা সেখানকার মাছ, সামুদ্রিক ঘাস এবং প্রবালের ক্ষতি করে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে প্রবালপ্রাচীরের নিজেকে সারিয়ে তোলার জন্য ক্ষমতা হ্রাস পায়।
Coral on the Great Barrier Reef - Image Greening Australia.jpg
Coral on the Great Barrier Reef - Image Greening Australia
ড. পারসনস বলেন, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের প্রায় ১০ শতাংশের আবাসস্থল, এর বেশিরভাগই পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে পাওয়া যায় না। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াতেই জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতির নিশ্চিহ্ন হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিহত করে পরিবেশ সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয়, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়ের প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন।

তবে ব্যক্তিপর্যায়ের প্রচেষ্টাও ফলপ্রসূ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জল-সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ড. পারসনস বলেছেন যে আমরা সকলেই আমাদের আচরণের সাথে সাথে ভূ-প্রকৃতিকেও শুষ্ক জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি, যা আরও ঘন ঘন ও তীব্র খরার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার মধ্যে মানিয়ে চলতে আমাদের সাহায্য করতে পারবে।
climate.jpg
Catherine Ganter is a senior climatologist at the Bureau of Meteorology - Image BOM. Dr Blair Parsons is the Director of Impact at Greening Australia - Image Greening Australia.
অস্ট্রেলিয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ঘটনাগুলি মানুষ এবং পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এগুলির জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের মিজ গ্যান্টার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গিয়ে বা ডাউনলোড করে আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস এবং সতর্কতা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে প্রয়োজনমত যে কোনও পরামর্শ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার লিঙ্কে ক্লিক করুন।

Share