অস্ট্রেলিয়ান ভিসার নিয়ম পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

گذرنامه استرالیا

Source: SBS

গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ভিসার নিয়ম-কানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং দক্ষ অভিবাসীরা ২০২০ সালে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাইগ্রেশন এজেন্টরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থার সাম্প্রতিক সংস্কারের, যেমন, নতুন দুটি রিজিওনাল ভিসার প্রভাব এখন অনুভূত হচ্ছে।


আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় যখন তাদের পড়াশোনা শুরু করে তখনকার তুলনায় তিন বছর পর পড়াশোনা শেষে তাদের বসবাস ও কাজের সুযোগ ভিন্ন রকম হয়ে যায়।
মাইগ্রেশন এজেন্টরা, যেমন SeekVisa এর Ben Watt বলেন, ভিসা ব্যবস্থায় গত দু’বছরে ঘন ঘন পরিবর্তন আনার ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করাটা ভিসা আবেদনকারীদের জন্য দিনকে দিন জটিলতর আকার ধারণ করছে। এ সময়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার সংখ্যা কমানো হয়েছে এবং অভিবাসীদেরকে রিজিওনাল এলাকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

বড় বড় শহরগুলো থেকে চাপ কমানোর জন্য তারা এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে গত নভেম্বরে ফেডারাল সরকার দু’টি নতুন রিজিওনাল ভিসা চালু করেছে।

সফল আবেদনকারীদেরকে রিজিওনাল এলাকায় বসবাস ও কাজ করতে হবে। ব্রিসবেন, সিডনি এবং মেলবোর্নের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার যে-কোনো অঞ্চলে কমপক্ষে তিন বছর বসবাস ও কাজ করলে তারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার জন্য উপযুক্ততা লাভ করবে।

ফেডারাল সরকার রিজিওনাল এলাকায় অভিবাসীদের পাঠাতে চাইছে। তবে, এটি বাস্তবায়ন করাটা স্টেটগুলোর উপর নির্ভর করছে। কারণ, বেশিরভাগ স্থানে স্টেট স্পন্সরশিপের দরকার হবে।

রাজ্য সরকারগুলো নির্ধারণ করবে কারা এই ভিসার জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে তারা আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বয়স এবং রিজিওনাল এলাকায় বসবাসের সময়কাল ইত্যাদি খতিয়ে দেখবে।

মাইগ্রেশন এজেন্ট Kirk Yan সন্দেহ করেন রাজ্য সরকারের দ্বারা নির্ধারিত এই মাণদণ্ড এবং কোটাগুলোর অর্থ হলো এই অর্থবছরে সত্যিকারভাবে যতেগুলো ভিসা ইস্যু করা হয়েছে তা ফেডারাল সরকারের দ্বারা নির্ধারিত ২৫,০০০ এর চেয়ে অনেক কম হবে।

Mr Yan আরও বলেন, বহু রাজ্যে ভিসা-আবেদনকারীদেরকে “লয়ালিটি টেস্ট” এর শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন, সেই অঞ্চলে ইতোমধ্যে কমপক্ষে এক বছর বসবাস করা। এর ফলে মেলবোর্ন ও সিডনিতে পড়াশোনা করা হাজার হাজার শর্ট-টার্ম গ্রাজুয়েট বাদ পড়বে।

সফল আবেদনকারীদের জন্য এ পথে পার্মামেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়াটা উৎসাহজনক নয়।

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট জেসন চীন থেকে এসেছেন। তিনি রিজিওনাল ভিসা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন। জেসন তার পুরো নাম বলতে চান না। তিনি তাসমানিয়ান স্পন্সরশিপ নিশ্চিত করেছিলেন এবং আবেদন জমা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে, ডিসেম্বরে তিনি ভিসা পান।

হোবার্টে তিনি ফাইন্যান্স কিংবা অ্যাকাউন্টিং খাতে কাজ পাওয়ার আশা রাখেন। তিনি এসব বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করেছেন। ইমেইলের মাধ্যমে এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য মিনিমাম ইনকাম থ্রেশহোল্ড, বছরে ৫৩,৯০০ ডলার আয় করার বিষয়ে তিনি অনেক চিন্তিত।

প্রথম স্টেট হিসেবে তাসমানিয়া এই আবেদনের সুযোগ খুলে দেয়। সেখানে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। মিস্টার ওয়াট বলেন, এর ফলে মাণদণ্ড নির্ধারণ করার কয়েক সপ্তাহ পরই তারা স্টেট নমিনেশনের শর্ত কঠিন করে দেয়।

তিনি বলেন, তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, স্টেট স্পন্সরশিপ পাওয়ার জন্য একটি ডিপ্লোমা আর যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে না।

রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ায় আরও বেশি অভিবাসী পাঠানোর বিষয়টি তিনি সমর্থন করেন। তবে তিনি বলেন, একেবারে অন্তিম সময়ে পরিবর্তন সাধন করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।

তাসমানিয়ার Department of State Growth এর একজন মুখপাত্র বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে নতুন রিজিওনাল ভিসাগুলো চালু করার পর প্রচুর ভিসা-আবেদন জমা পড়েছে।

মুখপাত্র এটা নিশ্চিত করেন নি যে, স্টেট নমিনেশনের জন্য একটি ডিপ্লোমা আর যথেষ্ট হবে বিবেচিত হবে না। তবে তিনি বলেন, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ করা হলেই স্টেট নমিনেশন মিলবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।

কয়েকটি স্থান ইতোপূর্বে বরাদ্দ করা হয় স্কিলড ইনডিপেন্ডেন্ট ভিসা (সাবক্লাস ১৮৯) এর জন্য। এই ভিসাটি ২০১৮ সালে বিতর্কিত ৪৫৭ ভিসাগুলোকে প্রতিস্থাপিত করেছে। এখন এটি নতুন রিজিওনাল ভিসা স্ট্রিমের দিকে পুনরায় পরিচালিত করছে।

অভিবাসীদের জন্য তাই পার্মামেন্ট রেসিডেন্ট ভিসার বিভিন্ন অপশন আরও কমে গেছে।

মাইগ্রেশন এজেন্ট বেন ওয়াট ধারণা করছেন, সরকার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা সীমিত করায় অস্থায়ী ভিসাধারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বড় বড় শহরগুলোতে একটি ‘আন্ডার-ক্লাস’-এর সৃষ্টি হবে।

Kirk Yan মনে করেন, সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যারা সে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন, অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসার আগে তারা দু’বার চিন্তা করবেন।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .



Share