ঘরোয়া ও পারিবারিক সহিংসতার শিকারদের আইনী সহায়তা পেতে সংগ্রাম করতে হয় কেন?

Law and Justice, Legality concept.

Australian flag and golden scale with a judge's gavel. Source: iStockphoto

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

অস্ট্রেলিয়ায় ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হওয়া হাজার হাজার ব্যক্তি আইনজীবিদের ফিজ দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন না। ঘরোয়া ও পারিবারিক সহিংসতার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষরাই নিপীড়ক এবং নারী ও শিশুরা তাদের নির্যাতনের শিকার। আর, যে-সব নারী এই নিপীড়নমূলক সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চান, তারা ন্যায় বিচার লাভের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখিন হয়ে থাকেন।


নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ এবং ঘরোয়া নির্যাতনের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সরকারি আইন পরিষেবাগুলোর খোঁজ করতে হয়। সরকারিভাবে অপ্রতুল অর্থায়ন করা এসব পরিষেবাগুলোর খোঁজ অনেক সময় সহজে পাওয়া যায় না।

এ রকম অনেকেই আছেন, যারা আইনী পরিভাষাগুলো, পদ্ধতি এবং বিচার-ব্যবস্থা বুঝতে পারেন না। বহু ক্ষেত্রে লিগাল এইড বা আইনী সহায়তা চেয়ে করা আবেদনগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর, এর বিপরীতে, তাদের নির্যাতকরা একই সময়ে সেই একই পরিষেবা গ্রহণ করে থাকে।

আর, যারা অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন নি এবং ইংরেজি যাদের প্রথম ভাষা নয়, তাদের জন্য এ বিষয়টি আরও জটিলাকার ধারণ করে।

মারিয়ার জন্ম আর্জেন্টিনায়। নিপীড়নের শিকার হওয়ার আগে, তিনি ১২ বছর তার সঙ্গীর সঙ্গে বসবাস করেছেন। এরপরই তার সঙ্গীর আচরণের ধারা পরিবর্তিত হতে থাকে।

তিনি যে পারিবারিক নিপীড়নের শিকার, সেটা বুঝতে তার বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছে।

তার সঙ্গী তাকে কখনই শারীরিকভাবে আঘাত করে নি। তারপরও, তিনি ভীতির সঙ্গে জীবনযাপন করতেন।

তাদের সন্তানদের কী ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হবে, সেটা নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন।

এই নিপীড়নমূলক সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে যান মারিয়া। এজন্য লিগ্যাল ফিজ হিসেবে তার হাজার হাজার ডলার খরচ হয়। আর, এজন্য তার ঋণ বেড়েই চলেছে।

ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার ব্যক্তিদের অনেকেই কোনো আইনজীবি ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ান আদালতে যান। তবে, মারিয়া আইনী সহায়তা চেয়েছিলেন।

এসবিএস-এর সঙ্গে যখন তিনি কথা বলেন, তখন তার নাম-পরিচয় গোপন করা হয়েছে এবং তার কণ্ঠস্বরও পরিবর্তিত করে দেওয়া হয়েছে।
1-800-RESPECT নম্বরে কল করেন মারিয়া।

ভীতি প্রদর্শন ও অবমাননাকর কথাবার্তাও যে পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে পড়ে, এ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। এ রকম কল করে তিনি এ সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রতিনিয়ত তিনি এসবের শিকার হতেন।

এভাবে তিনি কোয়ের্সিভ কন্ট্রোল এবং গ্যাসলাইটিংয়ের মতো শব্দগুলোর অর্থ সম্পর্কেও জানতে পারেন।

আক্রমণ, হুমকি প্রদান, নিপীড়ন এবং ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে নির্যাতন করা কোয়ের্সিভ কন্ট্রোল বা দমনমূলক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে।

আর, মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনের একটি রূপ হচ্ছে গ্যাসলাইটিং। এর মাধ্যমে কেউ কারও মানসিক সুস্থতা, বাস্তবতা অনুধাবন কিংবা স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

ইনটাচ মাল্টি-কালচারাল সেন্টার এগেইনস্ট ফ্যামিলি ভায়োলেন্স এর সিইও মিকাল মরিস বলেন,

তাদের সেন্টারে আসা নারীদের মাঝে ৬০ শতাংশ নারী কোয়ের্সিভ কন্ট্রোল এবং গ্যাসলাইটিং সম্পর্কে সচেতন নন। আর, প্রায় ৭০ শতাংশ নারী তাদের আইনী অধিকারগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত নন।

মিজ মরিস বলেন, ভাষা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে, বিশেষভাবে, ইংরেজি তাদের প্রথম ভাষা না হওয়ার কারণে, তারা আইনী সহায়তা গ্রহণ করতে পারেন না।

ন্যায় বিচার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সরকারি নীতিমালা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাঝে সমন্বয়-সাধনের দায়িত্ব পালন করে থাকে অ্যাটর্নি জেনারেলের ডিপার্টমেন্ট।

নতুন তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০২০ সালে জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত পুরুষেরা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক লিগাল এইড গ্রান্ট পেয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল লিগাল এইড-এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছেন সিডনি ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক সাইমন রাইস।

তার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব গ্রান্টের ৬৫ শতাংশ পেয়েছেন পুরুষেরা, নারীরা পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ আর বাকি ২ শতাংশ কারা পেয়েছেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না।

অস্ট্রেলিয়ার নারীরা সিস্টেমেটিক্যালি বা ক্রমপরম্পরায় প্রতিকূল অবস্থায় আছেন। ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রে লিগাল এইড থেকে এ চিত্র বোঝা যায়।

আইনের এই ক্ষেত্রটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিবাদীই হলো পুরুষ।

অস্ট্রেলিয়ার আইনকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ক্রিমিনাল ল, সিভিল ল এবং ফ্যামিলি ল।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল লিগাল এইড স্টাটিস্টিক্স রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ সালে ১২৯,৬০৫ টি লিগাল এইড গ্রান্ট প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষেরা পেয়েছে ৮৩,৫০৩টি গ্রান্ট এবং নারীরা পেয়েছে ৪৩,১৬০ টি গ্রান্ট। আর, যাদের প্রতি লৈঙ্গিক মানদণ্ড প্রযোজ্য নয়, তারা পেয়েছে ২,৯৪২টি গ্রান্ট।

উইমেন’স লিগাল সার্ভিস ভিক্টোরিয়ার অ্যাক্টিং চিফ একজিকিউটিভ অফিসার হেলেন ম্যাথিউস বলেন, তারা প্রতিটি কেস নিতে পারেন না।

অস্ট্রেলিয়ায় লিগাল এইড কমিশনগুলোর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলো স্টেট ও টেরিটোরি এজেন্সিগুলোর দ্বারা একসঙ্গে সহায়তা করে থাকে।

এসব প্রক্রিয়ার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দেখা যেতে পারে। যেমন, ঘর-পরিবার, উপার্জন ও সহায়-সম্পদ হারানো।

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের আবেগের ওপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

লিগাল সার্ভিস যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো ফৌজদারি বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে, যে-রকমটি প্রায়ই দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তারা তার নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে ফ্যামিলি লয়ের অধীনে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টের কারণে।

আইনজীবিরা ঘণ্টা প্রতি গড়ে ৫০০ ডলার করে চার্জ করে থাকেন। বেশিরভাগ লোকই এ রকম ফিজ প্রদানের সামর্থ্য রাখেন না।

কেউ যদি আইনজীবির ফিজ প্রদান করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে তারা সেল্ফ-রিপ্রেজেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে নিজেই সরাসরি উপস্থিত হতে পারেন।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা তাদের কেস ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হন, বিভিন্ন প্রমাণ দাখিল করতে বাধ্য হন, আইনজীবিদের সহায়তা ছাড়াই।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদেরকে যে-সব বাধার সম্মুখীন হতে হয় সে-সম্পর্কে ল কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে,

২০০৯ সাল থেকে জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া বেশ কিছু লিগাল এইড প্রজেক্টের বাস্তবায়ন করছে। তবে, এগুলোর কোনোটি থেকেই আইনী প্রতিনিধিত্ব লাভের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর, এগুলোর সবগুলো থেকেই সহায়তা পেতে হলে যোগ্যতার মাণদণ্ডের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

উইমেন’স লিগাল সার্ভিস ভিক্টোরিয়ার অ্যাক্টিং চিফ একজিকিউটিভ অফিসার হেলেন ম্যাথিউস বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে থাকা নারীদের একটি বড় অংশই সাহায্যের মুখাপেক্ষী; কিন্তু, তারা এখনও এসব গ্রান্ট পাওয়ার জন্য উপযুক্ততা লাভ করে নি।


অস্ট্রেলিয়ায় লিগাল এইড বিষয়ক আরও তথ্যের জন্য এবং এসবিএস এর ইনভেস্টিগেটিভ সিরিজের জন্য এসবিএস ল্যাঙ্গুয়েজ ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

কোনো শিশু, অন্য কোনো ব্যক্তি কিংবা আপনি নিজে যদি গুরুতর কোনো বিপদের সম্মুখীন হন, তাহলে কল করুন 000 নম্বরে।

আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কারও সহায়তার দরকার হলে ভিজিট করুন কিংবা কল করুন 1-800-737 732 নম্বরে।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share